স্ত্রী ছাড়া কেউ এগিয়ে এলো না, এটা জনগণের ব্যর্থতা : হাইকোর্ট

বরগুনায় স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আজ দুপুর ২টার মধ্যে বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। আর এ বিষয়ে সমন্বয় করতে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি আ্যার্টনি জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে গতকাল বুধবার সকালে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে তাঁর স্বামী নেয়াজ রিফাত শরিফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুই সন্ত্রাসী। নববধূ ও এক যুবক বাধা দিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।

আজ এ বিষয়ে আদালত বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করল, তাঁর স্ত্রী ছাড়া কোনো লোক এগিয়ে এলো না, এটা সমগ্র জনগণের ব্যর্থতা। এ দেশের জনগণ তো এমন ছিল না। আমরা নিজেরাও এ ঘটনায় মর্মাহত।’

এদিকে, আজ এ ঘটনায় নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরিফ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ সকালে চন্দন নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি এই মামলার ৪ নম্বর আসামি।’

তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে বাকি আসামিদের নাম এবং চন্দনকে কোথা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানায়নি পুলিশ। এ মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে, আজ দুপুর নাগাদ শরিফের মরদেহ বরিশাল থেকে বরগুনায় আনা হবে বলে পারিবারিকভাবে জানানো হয়েছে। নিহতের জানাজা আজ বাদ আসর তাঁদের নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে।

হামলার পর শরিফকে গুরুতর আহতাবস্থায় প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভর্তির এক ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শরিফের মৃত্যু হয়।

শরিফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সন্ত্রাসী দুই যুবক ধারালো দা দিয়ে একের পর এক কোপাতে থাকে শরিফকে। এ সময় শরিফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই সন্ত্রাসীকে বারবার প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

এ ঘটনাটি পুলিশের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় ছিল। নিহত রিফাত শরিফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল হালিম দুলাল শরিফ। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিফাত।

ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, ভিডিওচিত্রে যে দুই সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে, তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং অন্যজন রিফাত ফরাজী। তাঁরা উভয়েই স্থানীয়ভাবে ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ঘটনায় একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে বলে বরগুনা থানা সূত্রে জানা গেছে।