স্মৃতির প্রতীক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রাবি’র সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা, সংস্কৃতির পাশাপাশি সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার জন্যেও পরিচিতি রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা বাড়িয়ে দিয়েছে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য। এদিক দিয়ে সবার আগে আসে সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ারের কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে কিছুদুর এগুলেই হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে কলকব্জা মিশ্রিত একটি টাওয়ারের। মনে হবে যেন কোন মেশিনের অংশ। কিন্তু এটাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার। যেটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে জনান দিয়ে স্মৃতির প্রতিক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে টাওয়ারটি।

১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই গুটিকয়েক শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ নামে খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের। এরপর নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এটি ৬৭তম বছরে পা দিয়েছে। দীর্ঘ এই ৬৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে গেছে বিভিন্ন ঘটনা। তৈরি হয়েছে অনেক উজ্জ্বল ইতিহাস। জন্ম দিয়েছে অনেক জ্ঞান পিপাসু পন্ডিত। বিশ্ববিদ্যালয় যখন পঞ্চাশ বছরে পদার্পণ করবে তখনই স্মৃতির মণিকোঠায় স্মৃতির প্রতিক হয়ে ধরে রাখার জন্য টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দীর্ঘ সময়ের উজ্জ্বল ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০০৩ সালের ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় এক অনাড়ম্বর ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ অনুষ্ঠান।

RU Suborno Jayonti Tower2দৃশ্যনন্দন এই সুর্বণ জয়ন্তী টাওয়ারটি ইস্পাতের তৈরি একটি ম্যূরাল। এতে তুলে ধরা হয়েছে সভ্যতার ক্রমবিকাশ। ইস্পাতের তৈরি এই ম্যুরালটির দিকে তাঁকালে দেখা যাবে নিপুণ কারুকাজে তৈরি টাওয়ারটির মাঝে আছে কয়েকটি পায়রা। কোনোটি ডানা মেলে আছে। মনে হবে এই বুঝি উড়াল দিবে। আবার কোনোটি ঝুপটি মেরে বসে আছে। টাওয়ারটির নিচে তাঁকালে দেখা যায় টাইলস্’র বেড়ি বাঁধানো টাওয়ারটির চতুর্দিক ঘিরে ক্ষুদ্র এক জলধারা। দূর থেকে তাঁকালে পানির নৃত্য দেখা যায়। কাছে গিয়ে দেখা মিলবে কিছু জলধারায় ছোট ছোট মাছ।

টাওয়ারের খুব কাছেই ইস্পাতের একটি দেয়াল আছে। দেয়ালটির নাম ‘ইস্পাতের কান্না’। সেই দেয়ালে তাকালে দেখতে পাওয়া যাবে মালবাহী ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি, মানুষ, সাইকেল। যা দেখে যে কাউকে প্রাচীন গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করতেই হবে। আছে স্মৃতিসৌধের মতো মহান এক কারুকাজ যার নিচে আছে ফুটন্ত সূর্যমুখী ফুল। শহীদ মিনারের কারুকাজও করা আছে, আছে ইস্পাত দিয়ে তৈরি মুক্তিযুদ্ধের কারুকাজ। যা মহান মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের গণহত্যা মনে করিয়ে দেয়। সেই কারুকাজগুলো শিকল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য আছে টাওয়ারটির চারপাশে ঘিরে দেয়ায় বসার সুন্দর জায়গা।

অপরূপ সুন্দর এই স্থাপনার ভাস্কর রাজশাহীর কৃতি সন্তান শিল্পী মৃণাল হক। রাবি প্রশাসন ও সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার নির্মাণ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যতম এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ এবং তার পাশে একটি ম্যুরাল তৈরি করতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

RU Suborno Jayonti Tower3জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বেশকিছুদিন থেকে টাওয়ারটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে ছিল। তবে বর্তমান প্রশাসন টাওয়ারটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তারপর টাওয়ারের চারপাশে ছোট বাগান করা হয়েছে। টাওয়ারের নান্দনিকতা বৃদ্ধির জন্য যতটা প্রয়োজন রং করা হয়েছে। টাওয়ারের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নির্মাণের সময় থেকেই ইতিহাস-ঐতিহ্যকে জনান দিয়ে স্মৃতির প্রতিক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে টাওয়ারটি। অসংখ্য ইতিহাসের স্মৃতি জড়িয়ে যতদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে ঠিক ততদিন এভাবেই কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ারটি।