ভালোবাসার সুড়ঙ্গ রহস্য (ভিডিও)

প্রকৃতি অপার রহস্যের ভান্ডার। তাই সে মাঝে মাঝেই আমাদের চমকে দেয় নিজের সৃষ্টি দিয়ে। এমনই এক অদ্ভুত সৃষ্টি লাভ টানেল বা ভালোবাসার সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গ মানেই আমাদের মনে হয় মাটির নীচের গোপন কোনো রাস্তা। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালী আচরণে ভালোবাসার সুড়ঙ্গ নামের এই সুড়ঙ্গে প্রকৃতি ও ভালোবাসা মিশেছে এক অপুর্ব নান্দনিকতায়। তাই একে অভিহিত করা হয় “টানেল অব লাভ” হিসেবে।

৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গটি ইউরোপের ইউক্রেন এর ক্লেভান শহরে অবস্থিত। এই সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে ভারী শিল্প পরিবহনের জন্য বয়ে চলেছে এই ট্রেন লাইন। প্রকৃতির নিজের হাতেই তৈরি বলেই কিনা সহসা এটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এ মাঝ দিয়ে চলে গেছে ট্রেন লাইনটি।

ওর্জহিভ বলে একটি জায়গার ধারে রেললাইনটি দুটি ভাগ হয়ে দুই দিকে চলে গেছে। একটি রেললাইন গেছে ক্লেভানের দিকে, আর আরেকটি গহিন বনের ভেতরে ঢাকা পড়া একটি সামরিক ঘাঁটিতে। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন স্থাপন করা হয় এই সামরিক ঘাঁটি। সেনাঘাঁটিটিকে আড়াল করার জন্য প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছিল। গুগল মানচিত্রে ঘাঁটিটিতে বেশ কিছু সামরিক যান দেখা যায়, যা থেকে ধারণা করা যায় যে ঘাঁটিটি এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে।
আর ওর্জহিব থেকে ক্লেভানে যাওয়ার পথে পড়ে এই টানেল অব লাভ। চলাচলের সুবিধার্থে এর গাছপালাগুলো সুন্দর করে কেটেছেঁটে রাখা হয়। তবে সামরিক মালামাল নয়, একটি প্লাইউড কারখানার মালামাল বহন করার জন্য মালবাহী ট্রেনের যাতায়াত এখন এই পথে। প্লাইউড কারখানাটির অবস্থান ওর্জহিবে। ইউক্রেনের নানা প্রান্ত থেকে সংগৃহীত বার্চগাছের কাঠ এই রেলপথ দিয়ে কারখানাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কারখানাটিতে তৈরি হওয়া প্লাইউডের প্যানেলগুলোকেও মালগাড়িতেই পাঠানো হয়, যা ক্লেভান জংশন থেকে প্রধান রেলপথ হয়ে পশ্চিম ইউরোপের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে যায়।

টানেল অব লাভের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকবার ট্রেন যাওয়া-আসা করে। সুড়ঙ্গটি কারখানার মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূর থেকে শুরু হয়েছে। যত দূর জানা যায়, সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার।

ইউক্রেনে এই সুড়ঙ্গটি ভীষণ জনপ্রিয়। নব বিবাহিত দম্পতিদের প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসতে ও ছবি তুলতে দেখা যায়। আর তাই এর নাম হয়ে গেছে ‘টানেল অব লাভ’ বা ভালোবাসার সুড়ঙ্গ। তবে এই পর্যটকরা ট্রেনচালকদের জন্য বড় ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এখানে অতি সাবধানে ট্রেন চালাতে হয়, তার পরও দু-একটি দুর্ঘটনার নজির রয়েছে। কাগজে-কলমে এই সুড়ঙ্গের দেখভাল করার দায়িত্ব নির্দিষ্ট কারো ওপর বর্তায়নি। তবে বছর কয়েক আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে কিছু গাছ কেটেছিল, তাতে ভয়ানক শোরগোল সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে তারা আর কোনো গাছ কাটার সাহস করেনি।