রাবি শিক্ষার্থীর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিল দুই ছাত্রলীগ নেতা

ru logo

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর চোখ তুলে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এসময় সাংবাদিককে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। গত শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে এই ঘটনা ঘটে। তবে তারা দুজনই চোখ তুলে নেওয়া বা হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী হলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাকিতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও হবিবুর রহমান হলের ১১৫ নাম্বার কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান আশিক ও অভিযুক্তরা হলেন- রাবি ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক হাশেম ও উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হক।

আশিক অভিযোগ করে বলেন, আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। হটাৎ রুমে নক করার শব্দ শুনে রুম খুলে দিলে দুইজন রুমে প্রবেশ করে এবং আমার কাছে জানতে চান কবে তার রুমমেট এই কক্ষ ছাড়বেন। এসময় আশিক বলেন, আমি তো জানি না। ওনি তো এখন ঘুমাচ্ছেন। আপনারা পরে এসে জেনে নিবেন। এসময় তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এত রাতে আপনারা এটা জানার জন্য কক্ষে এসেছেন। এটা বলার জন্য তো অন্য সময়ও আসতে পারতেন। এই কথা বলাতেই আমার ওপরে তারা চড়াও হয়ে বলেন ‘পরে আসব মানে তুই চোখ নামিয়ে কথা বল, তোর চোখ তুলে নেব। এমন কথাবার্তা বললে আমার বন্ধু সাদ্দাম ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আরাফাতকে ডেকে আনি। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে আরাফাত তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তাকে তুই-তোকারি করে অনবরত হুমকি দেয়।

আশিক আরো বলেন, ‘ এ বিষয়টি ইতিমধ্যেই আমি হল প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েছি। সাংবাদিক ও আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ আবার চোখ তুলে নেয়ার হুমকি প্রদানের আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এবিষয়ে ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আরাফাত বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতে চাইলে, ‘ছাত্রলীগ নেতা হাশেম আমাকে উদ্দেশ্য করে বাজেভাবে তুই তোকারি করে কথা বলা শুরু করে। আমি কেন ওখানে গেছি? বলে পাল্টা প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে সে ‘‘তোকে দেখে নেবো, যা করার করে ‘নিস পারলে’ বলে, মারতেও উদ্যত হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত অন্যান্য আবাসিক শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।’

চোখ তুলে নেওয়া হবে বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত রাবি ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক হাশেম বলেন, আমরা রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১১৫ নাম্বার কক্ষে গিয়েছিলাম তার রুমমেট কবে কক্ষ ছাড়বেন সেই বিষয়ে জানতে। এসময় আশিক আমাদেরকে বলেন, এত রাতে কেন কক্ষে এসে তাকে নক করা হয়। নক করাতেই তিনি আমাদের ওপর চোখ রাঙিয়ে কথা বলতে শুরু করলে তাকে চোখ নামিয়ে কথা বলতে বলা হয়। কিন্তু তার চোখ তুলে নেওয়া হবে এই কথা বলা হয়নি। এরজন্য পরে আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি।

তবে এ বিষয়ে আশিকের দাবি, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠলে আমার চোখ কেমন লাল থাকতে পারে। কিন্তু তারা দুজন আর আমি একা। তাদের সঙ্গে কেন চোখ রাঙাতে যাব।

আরাফাতকে তুই তোকারি করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাশেম বলেন, সে আমার জুনিয়র। তাই তাকে তুই বলে সম্বধোন করেছি। তাছাড়া তাকে দেখে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হক বলেন, আমি ও আমার বন্ধু ওই কক্ষে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। তাকে দেখে নেওয়ার বিষয়ে কোন কথা বলা হয়নি। আর আরাফাতের বিষয়ে বলেন, সে আমার পরিচত ছোট ভাই। তাই তাকে তুই বলে কথা বলেছি। এছাড়া তেমন কিছুই বলেনি।

শহিদ হবিবুর রহমানের হল প্রাধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাকে মৌখিকভাবে ১১৫ নাম্বার কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী বিষয়টি জানিয়েছে। এই ঘটনা শোনার পরে অভিযুক্তদের দেখা করতে বলা হয়েছে। যদি অভিযোগ সত্য হয় তাহলে হল প্রসাশন এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।

জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমি বিষয়টি ইতিমধ্যেই শুনেছি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমি এই বিষয়ে অবগত হয়েছি। ছাত্রলীগের নামে এধরনের কাজ আমরা কখনোই সমর্থন করিনা। আমি অতিদ্রুত এটার তদন্ত বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলছি।’