শার্শার নাভারণ প্রতিবন্ধী প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের বেকার জীবন থেকে মুক্তির আর্তি

বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আশা নিয়ে বেঁচে আছে তারা। জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকতে চায় এরা পিছিয়ে পড়া শিশুদের ভবিষ্যত গড়ার প্রত্যয় নিয়ে। নাভারণ প্রতিবন্ধি প্রাইমারি স্কুলের ছয়জন শিক্ষকের এখন বেঁচে থাকার আর্তি।

শার্শা উপজেলা প্রতিবন্ধি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকের উদ্যোগে ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে নাভারণ প্রতিবন্ধি প্রাইমারি স্কুলটি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ২০ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই বিদ্যালয়টির।

প্রধান শিক্ষক বন্যা রানি মন্ডল জানান, আমরা কষ্ট করে লেখা পড়া শিখেছি, চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা ৬ জন শিক্ষক ও ৫ জন থেরাপিস্ট নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছি। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক ও উপজেলা প্রতিবন্ধি কল্যাণ সংস্থার ক্যাশিয়ার নিলু ভাষ্করের প্রচেষ্টায় এবং ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী ১৩০ জন। প্রতি দিন ক্লাসে উপস্থিতির হার প্রায় ৪০ শতাংশ।

উপজেলা প্রতিবন্ধি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ও নাভারণ প্রতিবন্ধি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচলনা পরিষদের সহ-সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে প্রতিবন্ধিদের লেখা-পড়া শেখানোর পাশাপাশি নিউরোডেভেলপ মেন্টাল প্রতিবন্ধি সুরক্ষার জন্য ফিজিও থ্যারাপী সেন্টার করেছি। উপজেলা প্রশাসনের নির্র্দেশনা নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালনা হচ্ছে। সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জুর সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদ থেকে নাভারণ প্রতিবন্ধি প্রাইমারী স্কুলের নামে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের একটি পরিত্যক্ত ভবন বরাদ্দকৃত টাকায় সংষ্কার করে সেখানেই চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বন্ধের দিন ছাড়া দুপুরে টিফিনের ব্যবস্থা করে থাকেন দাতা সদস্যরা। বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসে টিফিন বাবদ খরচের টাকা দিয়ে থাকেন।

প্রতিবন্ধি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সজিব হোসেন, রিপন, রাফিকুল ইসলাম, তহমিনা খাতুন, ও লাবনী খাতুনসহ থ্যারাপি সেন্টারের শিক্ষকরা বলেন, নাভারণ প্রতিবন্ধি স্কুলটি জরুরী ভিত্তিতে জাতীয়করণ করা হলে আমরা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দলু ওহাব বলেন, বেনাপোল পৌরসভাসহ উপজেলা ১১টি ইউনিয়নে ২হাজার ৪২৪ জন প্রতিবন্ধিকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি মাসে ৭০০ টাকা হারে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলায় প্রতিবন্ধির সংখ্যা ৪,২০০। এদেরকে পর্যায়ক্রমে ভাতা প্রদান করা হবে। শার্শা উপজেলায় দুইটি প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। নাভারণ প্রতিবন্ধি প্রাইমারি স্কুল ও শার্শা উপজেলা সদরে নিশানা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত শার্শা প্রতিবন্ধি প্রাইমারি স্কুল। ভাতা ভোগীদের মধ্যে ডিহি ইউনিয়নে ১৯০, লক্ষণপুওে ১৫৭, বাহাদুরপুরে ১৭৭, বেনাপোলে ১৫৩, পুটখালীতে ১৯১, গোগায় ১৭৭, কায়বায় ২১৫, বাগআঁচড়ায় ২৪৬, উলাশীতে ২৩৬, শার্শায় ৩১১ ও নিজামপুর ইউনিয়নে ১৬০ জন এবং বেনাপোল পৌরসভায় ২১১ জন প্রতিবন্ধিকে মাসিক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।