মণিরামপুর মাহমুদকাটি প্রাইমারী স্কুলে সমাপনী মডেল পরীক্ষায় সবাই ফেল!

ফুঁসে উঠেছেন অভিভাবকরা, সব শিক্ষকের অপসারণ দাবি

যশোরের মণিরামপুরের মাহমুদকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম ডাক ছড়িয়ে রয়েছে উপজেলা জুড়ে। যেই প্রতিষ্ঠানে এক সময় সন্তানদের পড়াতে আগ্রহের সাথে ছুটে যেতেন গ্রামবাসী, সেই প্রতিষ্ঠানে এখন আর সন্তান না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন অভিভাবকরা।

সদ্যসমাপ্ত পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী মডেল পরীক্ষায় সব শিক্ষার্থী ফেল করায় ফুঁসে উঠেছেন তারা। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রধানসহ অন্য শিক্ষকদের অপসারণের দাবি তুলেছেন তারা। শনিবার (১৯ অক্টোবর) স্কুল চত্বরে আয়োজিত মা সমাবেশে প্রধান অতিথি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমা খানমের কাছে তারা এই দাবি করেন।

প্রায় ১০০ বছর আগে ১৯২৭ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘসময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হলেও গত তিন বছর ধরে এর খ্যাতি ধুলোয় মিশতে শুরু করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝর্ণারানী মিত্রসহ অন্য চার সহকারী শিক্ষকদের নানা অপকর্মের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণিতে ১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত মডেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তারা সবাই গণিতে ফেল করেছে। গণিতে ১০০ নম্বরের মধ্যে তাদের প্রাপ্ত সর্বনিন্ম নম্বর ০৩ এবং সর্বোচ্চ নম্বর ২৬।

অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত তিন বছর আগে যোগদানের পর থেকে কোন সময় তিনি নিয়মিত স্কুল করেন না। সকাল নয়টায় তিনি স্কুলে আসলে দুপুর না হতেই স্কুল ছাড়েন। এছাড়া স্লিপের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে অন্যশিক্ষকদের সবসময় দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। শিক্ষকদের কেউ প্রধানের নির্দেশনা মানেন না। প্রধান শিক্ষক নিজে কোন ক্লাস না নিয়ে সততা স্টোরের ভাজা বিস্কুট বিক্রির কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের পোশাক তৈরি করে এনে তাদের মাঝে বিক্রি করেন। কোন শিক্ষার্থী টাকা দিতে দেরি করলে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা আদায় করেন।

জাহাঙ্গীর বিশ্বাস নামে এক অভিভাবক জানান, অনেক দিন স্কুলে গিয়ে দেখা যায় বেলা ১০টা বাজার পরও কোন শিক্ষক স্কুলে আসেননি। এক সময় এই স্কুল থেকে প্রায় প্রতিবার বৃত্তি পেত শিক্ষার্থীরা। এখন স্কুলের নাজুক অবস্থা দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। তারা এক সপ্তাহের মধ্যে সব শিক্ষকের অপসারণ চান। অন্যথায় বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের পাঠানো বন্ধ করে দেবেন বলে জানান তিনি।

আমেনা বেগম নামে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন, অনেক অভিভাবকের অভিযোগ শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস না নিয়ে অফিসে বসে থাকেন। পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষকরা প্রশ্নের উত্তর বোর্ডে লিখে দেন। তাই দেখে বাচ্চারা খাতায় লেখে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম, ফয়সাল, সাকিব, কেয়া ও নুপুরসহ অনেক শিক্ষার্থী জানায়, স্যাররা ঠিকমত ক্লাস নেয় না। হেড ম্যাডাম ক্লাসে এসে শুধু অ,আ,ক,খ শিখিয়ে চলে যায়। তাদের কেউ অংকে পাশ করতে পারেনি বলে জানায় তারা।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির গণিত ক্লাস নেন শিক্ষক কামরুজ্জামান। সব শিক্ষার্থী মডেল টেস্টে গণিতে ফেল করার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে তিনি সব শিক্ষার্থীর ফেল করার বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি ঠিকমত ক্লাস নিই। তারপরও কেন সবাই ফেল করেছে বুঝতে পারছি না।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা রানী মিত্র মডেল পরীক্ষায় সবাই ফেল করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এবারের ন্যায় গত বছরও মডেল পরীক্ষায় কেউ পাশ করতে পারিনি। কিন্তু সেন্টার পরীক্ষায় সবাই পাশ করেছে। আমরা এবার ভাল করে চেষ্টা করছি। তার বিরুদ্ধে আনা অন্যসব অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের সভাপতি তুহিন বিশ্বাস বলেন, মডেল পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ায় পরবর্তীতে ভাল করার জন্য সব শিক্ষককে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যালয়টি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েকমাস প্রথম যখন আমি মাহমুদকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছি, তখন বিদ্যালয়ের নাজুক অবস্থা ছিল। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে অন্য শিক্ষকদের সমন্বয়হীনতার চরম অভাব রয়েছে। ওই স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোন শিক্ষার্থী বই দেখে পড়তে পারে না। অনেকভাবে শিক্ষকদের ধরা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত উন্নতি হবে।

এই বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, বিদ্যালয়টিতে মা সমাবেশে যাওয়ার পর অনেক অভিভাবক প্রধানসহ অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ করেছেন। তারা সব শিক্ষকের একসাথে অপসারণ দাবি করেছেন। প্রাথমিকভাবে শিক্ষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রতিষ্ঠানের উন্নতি না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।