রাজগঞ্জ স্কুল মাঠ থেকে ৪৬ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

যশোরের মণিরামপুর উপজেলারর রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ অবৈধভাবে দখল করে গড়ে ওঠা ৪৬ টি স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে বুল্ডোজার দিয়ে এসব স্থাপনা ভাঙা শুরু হয়। তবে, স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তা অমান্যের অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা। আর কর্তৃপক্ষ বলছেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই উচ্ছেদ কাজ চলছে।

উচ্ছেদের মধ্যে রাজগঞ্জের রুপসী সিনেমা হলও রয়েছে। যা একসময় এলাকাবাসীর একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম ছিল। তবে, লোকসানের কারণে বর্তমানে হলটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদের বিগত কমিটি মোটা অংকের টাকা নিয়ে খেলার মাঠে এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসিয়েছেন। স্কুলের নামে এসব টাকা নেওয়া হলেও উল্লেখযোগ্য কোন টাকা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা না দিয়ে তারা আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমান কমিটি আসার পর অনিয়মগুলো বেরিয়ে আসে। তখন কমিটি দোকানগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের ১৫ তারিখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দোকানপাট সরিয়ে নেওয়ার জন্য ১০ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে তা সরিয়ে না নেওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।

স্কুল কমিটি বলছেন, আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মাঠে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে বিগত কমিটির কাছে সাত লাখ টাকা দেন। কিন্তু কমিটি সেই টাকা আত্মসাৎ করে মাত্র ২৫ হাজার টাকা স্কুল ফান্ডে জমা দিয়েছেন। একইভাবে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে দোকানের জন্য তিনটি পজিশন নিয়েছেন। সেখান থেকে মাত্র ১৫ হাজার টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে। শুধু আব্দুর রহমান বা রফিকুল নয় যারাই স্কুলমাঠে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন সবাই মোটা অঙ্কের টাকা বিগত কমিটিকে দিয়েছেন। যার কিছুই হিসেব নেই স্কুলে। এসব অনিয়মের হিসেব দিতে না পারায় কয়েকমাস আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক একেএম ইউনুস আলমকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিকদের মধ্যে ইদ্রিস আলী জানান, মাসে এক হাজার টাকা ভাড়ায় ২৫ বছরের চুক্তিতে ১৪-১৫ লাখ টাকা খরচ করে তিনি স্কুল মাঠে বেকারি করেছেন। এখনও ১৬ বছর চুক্তির মেয়াদ রয়েছে। তারপরও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেকারি সরিয়ে নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। এই ব্যাপারে আদালতের স্মরণাপন্ন হলে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে কমিটির কাছে জবাব চেয়েছেন। সেই আদেশ অমান্য করেই জোর করে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইদ্রিস আলী বলেন, এই উচ্ছেদের কারণে তিনি ৩০ লাখ টাকা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

জানতে চাইলে রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি আব্দুল লতিফ বলেন, ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মাঠ দখলে নিলেও পূর্বের কমিটি নামমাত্র টাকা ফান্ডে জমা দিয়ে বাকিটা আত্মসাৎ করেছেন। স্কুল মাঠে দোকান বসিয়ে সাবেক কমিটির ভাগ্যের উন্নতি হলেও মাসে মাসে নামমাত্র ভাড়া পাওয়া ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কোন লাভ হয়নি। এই কারণে ৪৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। উচ্ছেদের আগে সবাইকে চিঠি দিয়ে স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময় দেওয়া হয়েছিল।

আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সভাপতি বলেন, চারটি স্থাপনার ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা সেটা রেখে দিয়েছি। আদালতের আদেশ পেলে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।