প্রশ্নের মুখে আইসিসির বিধান

জুয়াড়ির অনৈতিক প্রস্তাব গোপন করায় দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে এক বছরের সাজা স্থগিত রাখা হয়েছে। আইসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাকিবকে তিনবার প্রস্তাব দেয় জুয়াড়ি। কোনোবারই আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন ইউনিটকে বলেননি তিনি। তার বিরুদ্ধে তাই আকসুর ২.৪.৪ ধারা ভাঙার অভিযোগ এনে সাজা দেওয়া হয়েছে।

আকসুর ২.৪ অনুচ্ছেদে মোট নয়টি ধারা আছে। সাকিবের বিরুদ্ধে আনিত তিনটি অভিযোগই ২.৪ অনুচ্ছেদের চতুর্থ ধারার। এই অনুচ্ছেদের সবচেয়ে ‘লঘু’ ভুলেই সাকিবকে দেওয়া হয়েছে বড় সাজা। ২.৪ অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় কোনো খেলোয়াড় অনৈতিক সুবিধা বা উপহার নিলে সাজা কী হবে তা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ধারায়, অনৈতিক সুবিধা কিংবা উপহার নেওয়ার কোনো ঘটনা আইসিসিকে জানাতে ব্যর্থ হলে তার সাজার কথা বলা হয়েছে। ২.৪ অনুচ্ছেদের তৃতীয় ধারায় আছে, অনৈতিক সুবিধা কিংবা উপহার নেওয়ার সব ঘটনা জানাতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি। সাকিব যে ভুলটা করেছেন তা ২.৪ অনুচ্ছেদের চতুর্থ ধারার অন্তর্ভুক্ত, যেখানে উল্লেখ আছে- অপ্রয়োজনে দেরি না করে আকসুকে জুয়াড়ির অনৈতিক প্রস্তাবের ব্যাপারে জানাতে ব্যর্থ হওয়ার কথা।

অনুচ্ছেদের পরের ধারা অর্থাৎ ২.৪.৫ ধারায় আছে, প্রস্তাব পাওয়ার পর কোনো ঘটনার সব তথ্য আকসুকে জানাতে ব্যর্থ হলে সে বিষয়ে আকসুর করণীয়। পরের ধারায় আছে, আকসুর তদন্তে সহায়তা করতে ব্যর্থ হওয়া কিংবা সহায়তা করার প্রস্তাব প্রত্যাখানের শাস্তি কী হবে তা। আকসু সম্ভাব্য দুর্নীতির কথা বিবেচনা করে তদন্ত করতে চাইলে তাতে বাধা সৃষ্টি করা কিংবা ইচ্ছাকৃত দেরি করা, তথ্য নষ্ট বা বিকৃত করলে সাজা কী হবে তা বলা আছে ২.৪ অনুচ্ছেদের সপ্তম ধারায়। অষ্টম ধারায় আছে, তদন্তের স্বার্থে কোনো খেলোয়াড় নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে অস্বীকার করলে কিংবা সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে সম্ভাব্য সাজার কথা। ২.৪ অনুচ্ছেদের শেষ ধারায় আছে, অন্য কোনো ক্রিকেটারকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জুয়ার প্রস্তাবে সাড়া দিতে উৎসাহ দেওয়া, প্ররোচিত করা কিংবা আগের বর্ণিত ধারাগুলো ভাঙতে কাউকে সহায়তা করলে তার সাজার কথা।

আইন অনুযায়ী, সাকিবের ভুলের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান আছে। কিন্তু ধারা অনুযায়ী, সাকিব তুলনামূলক ছোট ভুল করেছেন। তাই সর্বনিম্ন সাজা ছয় মাসও পেতে পারতেন তিনি। আইসিসি তাকে দিয়েছে বড় দণ্ড। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সাবেক ক্রিকেটার, ক্রিকেট বিশ্লেষক কিংবা ক্রীড়া সাংবাদিকরা টুইট করে সাকিবের সাজা বেশি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন। আছে ভিন্নমতও।

ক্রিকেট বিশ্লেষক হারশা ভোগলে টুইট করেছেন, ‘সাকিবকে ক্রিকেট খেলতে দেখা আমার কাছে খুবই উপভোগ্য ছিল। আশা করছি, এই খারাপ পরিস্থিতি থেকে সে ফিরে আসবে। ক্রিকেট মাঠে আবার তার মূল্য বুঝিয়ে যাবে।’ রমিজ রাজা লিখেছেন, সাকিবের নিষেধাজ্ঞাটা খেলোয়াড় এবং ক্রীড়া প্রেমিদের কাছে একটা বড় শিক্ষা হয়ে থাকল। খেলার চেয়ে ব্যক্তি বড় হয়ে উঠলে তার পরিণতি খারাপ হয়। দুঃখ।’ ক্রীড়া সাংবাদিক বরিয়া মজুমদার টুইট করেছেন, ‘দু’বছর নিষিদ্ধ হওয়া সাকিবের জন্য বড় এক ধাক্কা। কঠোর সাজা! সাকিব কোনো দুর্নীতি করেনি। তারপরও তাকে কি বড় শাস্তি দেওয়া হয়ে গেল না?’ ভারতীয় সাবেক তারকা ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড় তার টুইটারে লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য! এটা কি সাকিবের ওপর খুবই কঠোর হওয়া নয়? সে কি ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল? আমি মনে করি, তার একমাত্র ভুল ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব আইসিসি এবং তাদের অ্যান্টিকরাপশন ইউনিটকে না জানানো। তার জন্য দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা খুবই কঠিন সাজা। আশা করবো আইসিসি তাদের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবে।’

ক্রীড়া সাংবাদিক, ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক অজয় মেমন তার ‘ক্রিকেটওয়ালা’ টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করেছেন, ‘সাকিব অবশ্যই সেরা একজন ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মুখ তিনি। অবশ্যই দেশের সবচেয়ে বেশি আয় করা ক্রিকেটারও। তিনি কেন জুয়াড়ির এমন প্রস্তাব কাউকে জানালেন না।’ সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল ভন অবশ্য সাকিবের দিকে তির ছুড়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সাকিবের জন্য কোন সহানুভূতি নয়। কারো জন্যই নয়। এখন ক্রিকেটারদের সবসময়ই বলে দেওয়া হয় কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। সোজা কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাতে তার কী এমন সমস্যা ছিল। দুই বছরের সাজা কম হয়ে গেছে। সাজা আরও বেশি দিতে হতো।’ ক্রিকেট নিয়ে কমেডি শো’ করা বিক্রম শেঠি টুইট করেছেন, ‘আমি আশা করবো, শেষ পর্যন্ত এটা সত্য হবে না। সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ করা মানে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কয়েক বছর পিছনে ফেলে দেওয়া। ভারত সিরিজে সাকিবের অনুপস্থিতি দিল্লির দূষণের চেয়েও বাংলাদেশ দলে বেশি প্রভাব ফেলবে।’