দুরারোগ্য ব্যাধির রোগীরা পাবেন আর্থিক সহায়তা

gov logo

দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীরা তাদের চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাবেন। ২৯ অক্টোবর সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়েছে- ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, থ্যালাসেমিয়া ও জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্তরা এসব চিকিৎসায় সহায়তা পাবেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এসব রোগে আক্রান্ত ভূমিহীন, শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু, বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। সমাজসেবা অধিদফতরের ‘হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম’র মধ্যেমে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হবে।

২৪ অক্টোবর অনুমোদিত এবং ২৯ অক্টোবর গেজেট আকারে প্রকাশিত এ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এসব দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীর পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদফতর হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে দুস্থ রোগীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অধিদফতরের মাধ্যমে ‘সাপোর্ট সার্ভিস ফর ভালনারেবল গ্রুপ (এসএসভিজি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিসের দরিদ্র রোগীদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

দেশের ৯৪টি হাসপাতাল এবং ৪৯২টি উপজেলায় এ কার্যক্রম চলছে। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগে স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি ছিল না। যা এখন নিয়মিত কর্মসূচি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে থ্যালাসেমিয়া। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি বলছে, দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।

অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আর অসচেতনতায় রোগীদের ৬৬ শতাংশেরই অকাল মৃত্যু হয়। সরকারি তথ্য মতে, দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। এদের ৪০ শতাংশেরই কিডনি বিকল। লিভার সিরোসিস একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের লিভার অকার্যকর হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে স্ট্রোকে আক্রান্তের হারও হাজারে ৫-১২ জন। স্ট্রোকের রোগীরা প্যারালাইজড হয়ে হঠাৎ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম হলে পরিবারটি ভীষণভবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এছাড়া বছরে প্রায় ৩০ হাজার শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় এদের অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। দেশে বছরে প্রায় ৮ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়। বর্তমানে এ রোগের সংখ্যা প্রায় সড়ে ৩ লাখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৪ দশমিক ১ ভাগ মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এসব রোগে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীরা ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান যুগান্তরকে বলেন, উদ্যোগটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এখানে যে রোগগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো জটিল এবং ব্যয়বহুল। অসচ্ছল রোগীদের পক্ষে এসব রোগের চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া অত্যন্ত দুরূহ। তিনি বলেন, যে বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে সেটি হল স্বচ্ছতা এবং দ্রুততা। অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়াটা যেন স্বচ্ছ থাকে এবং রোগী যেন তার প্রয়োজনের সময়ে টাকাটা হাতে পায়।

যেভাবে পাওয়া যাবে এ সেবা : এ ৬ রোগে আক্রান্ত রোগী সরাসরি সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কাছে আবেদন করবেন। আবেদনের ৭ দিনের মধ্যে তথ্য যাচাই শেষে উপপরিচালকের কার্যালয়ের পাঠানো হবে। উপপরিচালক ৭ দিনের মধ্যে অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে পেশ করবে। অনুমোদন শেষে সমাজসেবা অফিসারের কাছে ক্রস চেক অথবা রোগীর ব্যাংক হিসাবে ইএফটির মাধ্যমে অর্থ দেয়া হবে। তবে রোগীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

ভূমিহীন, শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তুকে ক্রমানাসুরে অগ্রাধিকার দেয়া ছাড়াও বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার বিচ্ছিন্নরাও এ সুযোগ পাবেন। আর্থিক সহযোগিতা জন্য রোগীকে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে হবে। ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে হিস্টোপ্যাথলজি, সাইটোপ্যাথলজি, বোনম্যারো রিপোর্ট, কিডনি রোগীর জন্য এ্যকিউট রেনাল ফেইলিউর অথবা ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর, রক্তের ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনির রিপোর্ট, লিভার সিরোসিসের রোগীর জন্য আল্ট্রাসনোগ্রামসহ আনুষঙ্গিক রিপোর্ট, স্ট্রোকে প্যারালাইজড রোগীর জন্য এআরআই, সিটিস্ক্যান, জন্মগত হৃদরোগীর জন্য ইকো কার্ডিওগ্রামসহ আনুষঙ্গিক রিপোর্ট এবং থ্যালাসিমিয়া রোগীর জন্য হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রপ্ররসিস রিপোর্ট দেখাতে হবে।

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ স্বাক্ষরিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো আবেদনকারী এক বছরে একবারের বেশি আবেদন করতে পারবেন না। আবেদনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজ-পত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মসনদ থাকতে হবে। তবে ভুল তথ্য বা মিথ্যা তথ্য দিলে আর্থিক সহায়তা বাতিল করা হবে।