স্বপ্নের স্কুলে ভর্তি হলো মণিরামপুরের লিতুনজিরা, ক্ষমা চাইলেন প্রধান শিক্ষক

হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া যশোরের মণিরামপুরের অদম্য মেধাবী লিতুনজিরার প্রতিবন্ধীত্ব নিয়ে তিরস্কার করা সেই প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ক্ষমা চেয়েছেন। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে লিতুনজিরার শেখপাড়া খানপুরের বাড়িতে গিয়ে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। এরপর পিতা হাবিবুর রহমানকে সাথে নিয়ে স্কুলে আসেন তিনি। স্কুলে এসে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লিতুনজিরার নাম অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। মেধাতালিতা অনুযায়ী লিতুনজিরার রোল নম্বর ৫৪।

হায়দার আলী মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

এরআগে লিতুনজিরার বাড়িতে যান ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীসহ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র। লিতুনজিরা ও তার পিতা-মাতার সাথে তারা কথা বলে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। লিতুনজিরাকে তার স্বপ্নের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য পিতা হাবিবুর রহমানকে অনুরোধও করেন ইউএনও।

ইউএনওর কথা শুনে এবং প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর বারংবার অনুরোধে দুপুরে মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আসেন হাবিবুর রহমান। স্কুলে এসে ষষ্ঠ শ্রেণির হাজিরা খাতায় তিনি মেয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করান।

গত ২৩ ডিসেম্বর হুইল চেয়ারে চড়ে মা জাহানারা বেগমের সাথে মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসে লিতুনজিরা। তখন প্রধানশিক্ষক হায়দার আলী তার প্রতিবন্ধী দশা নিয়ে তরিস্কার করেন। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণে মায়ের সাথে হতবাক হয়েছে লিতুনজিরা।

পরে প্রকাশিত ফলাফলে মেধা তালিকয় ৫৪তম স্থান লাভ করেও মনের কষ্টে সে এই স্কুলে ভর্তি হয়নি। পিতা হাবিবুর রহমান গত ১ জানুয়ারি উপজেলার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মেয়েকে ভর্তি করান। যদিও মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার বড় শখ ছিল লিতুনজিরার। পিতা-মাতাও একই স্বপ্ন দেখতেন।

উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও গৃহিণী জাহানারা বেগমের একমাত্র সন্তান লিতুনজিরা। ২০১৯ সালে স্থানীয় খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুখে ভরদিয়ে লিখে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

লিতুন জিরার মা জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় স্কুলের দোতলায় আসন পড়ে লিতুনজিরার। হুইল চেয়ারে করে মেয়েকে উপরে নেওয়া কষ্টসাধ্য বলে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীকে নিচে তার পরীক্ষা নেওয়ানোর জন্য অনুরোধ করি। তখন তিনি বলেন, কোমরে করে বস্তাভর্তি ধান ঘরের ছাদে তুলতে পারেন। মানুষ মাথায় করে ইটবালি তুলে কত বড়বড় বিল্ডিং তৈরি করছে। আর মেয়েকে নিয়ে আপনি উপরে উঠতে পারবেন না। এসব প্রতিবন্ধীদের এমন স্কুলে পড়ানোর দরকার কি?

হাবিবুর রহমান বলেন, মেয়ে ও তার মার মুখে এসব কথা শুনে লিতুনজিরাকে গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করিয়েছি।

এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী লিতুনজিরার মায়ের সাথে অসৈজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার আচরণে লিতুন জিরার মা কষ্ট পাবেন তা বুঝতে পারিনি। আমি এরজন্য তাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছি। লিতুন জিরাকে বুঝিয়ে আমার স্কুলে নেওয়ার জোর চেষ্টা করছি।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, লিতুনজিরার পিতা স্কুলে এসেছেন। তিনি মেয়ের নাম ষষ্ঠ শ্রেণির খাতায় অন্তর্ভুক্তি করে গেছেন। লিতুনজিরা যতদিন এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করবে ততদিন স্কুল ভবনের নিচতলায় সহপাঠিদের সাথে তার ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খুলনা) নিভারানী পাঠকের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন। লিতুনজিরার পিতা-মাতার সাথে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। লিতুনজিরা তার পছন্দমত যে প্রতিষ্ঠানে পড়তে চায়, সবসময় তারপাশে আমি আছি এবং থাকব।