অন্ননালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার

দেশে আশঙ্কাজনকভাবে অন্ননালির ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। পুরুষ কিংবা নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে সমানতালে। একসময় পুরুষের ফুসফুসের ক্যান্সার ও নারীর ক্ষেত্রে জরায়ুর ক্যান্সারের প্রবণতা ছিল বেশি। তবে বর্তমানে এ চিত্র পাল্টেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের প্রায় ১৪ শতাংশই অন্ননালির ক্যান্সারের রোগী।

অন্ননালির ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বাড়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, দূষিত ও ভেজাল খাদ্য গ্রহণই বেশি দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, খাবারের কাঁচামাল থেকে শুরু করে ব্যবহূত ভোজ্যতেল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানহীন। আর এসবে তৈরি খাবারই থাকছে প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায়। খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতাও পেয়েছে বহুমাত্রিকতা। খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে ক্ষতিকর কার্বাইড, শিল্পে ব্যবহূত রঙ, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ীরা। বেকারির পণ্য ও মসলায় মেশানো হচ্ছে কাপড়ে ব্যবহূত বিষাক্ত রঙসহ অন্যান্য রাসায়নিক। দূষিত ও ভেজাল এসব খাবার সাময়িক অসুস্থতার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

শুধু তা-ই নয়, নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্ননালির ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত শিল্প-কারখানায় ব্যবহূত রাসায়নিকযুক্ত পানি পরিশোধন ছাড়াই ফেলা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী নদী বা জলাশয়ে। এসব অঞ্চলে সেচের পানি ও তা থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন শাকসবজিতে আর্সেনিকসহ অন্যান্য ভারী মৌলের উপস্থিতি থেকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি থাকায় দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানিতে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞাও এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাঁচ বছরে শুধু ইউরোপের বাজারে রফতানি হওয়া ফল ও সবজিতে শনাক্ত হয়েছে ৬০০-এর বেশি ক্ষতিকারক উপাদান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, অন্ননালির ক্যান্সারের জন্য ভেজাল খাবার অনেকাংশেই দায়ী হতে পারে। কারণ আমাদের দেশে ফুড গ্রেড না মেনে অনেক খাবারই তৈরি হচ্ছে, যা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা অনুচিত। বিভিন্ন ধরনের খাবারে ফুড গ্রেডের বদলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের রঙ, লবণ বা চিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে তদারকির অভাব রয়েছে। খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হলে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।