মণিরামপুরে ফের লটারি হবে কৃষকদের

অর্জিত হচ্ছেনা আমন সংগ্রহের লক্ষমাত্রা
সরকারিভাবে আমন সংগ্রহের লক্ষমাত্রা কাঙ্খিতভাবে পুরণ না হওয়ায় সারা দেশের ন্যায় যশোরের মণিরামপুরে নতুন করে কৃষকের তালিকার লটারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রনালয়। এইলক্ষে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের জারি করা নির্দেশনা পত্র হাতে পেয়েছে মণিরামপুর উপজেলা কৃষি ও খাদ্য অফিস।

আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আমন চাষিদের তালিকা হতে নতুন করে লটারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। আর পুরনো তালিকার কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে ইতিমধ্যে উপজেলায় মাইকিং শুরু করেছে খাদ্য অফিস।

খাদ্য মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত নির্দেশনার সূত্রমতে, আমন সংগ্রহের নির্ধারিত সময়সীমার দুই-তৃতাংশ সময় পার হলেও সারা দেশে সরকারের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। আর মণিরামপুরে অর্জিত লক্ষমাত্রা ২৭.৭৭ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত মণিরামপুরে লটারি বিজয়ী দুই হাজার ১৫০ জন কৃষকের মধ্য হতে ৬৪৭ জন কৃষকের কাছ থেকে ৭০৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলবে এই ক্রয় কার্যক্রম।

এদিকে নতুনভাবে কৃষকের তালিকার লটারির খবরে আশার সঞ্চার হয়েছে বাদ পড়া আমন চাষিদের মধ্যে। সচ্ছতার সাথে প্রকৃত চাষিদের তালিকা হলে বিষয়টি ইতিবাচক হবে বলে ধারণা কৃষকদের।

উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের চাষি নুর আলম মিন্টু বলেন, আমরা তিন ভাই ধান চাষ করি। আমাদের কৃষি কার্ড রয়েছে। আগে তালিকা হওয়ার সময় আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েছি। কিন্তু লটারিতে নাম আসিনি। গোলায় এখনও ধান পড়ে আছে। বাজারে দাম কম হওয়ায় ধান বিক্রি করিনি। নতুন করে লটারি হওয়ার কথা শুনে খুশি হইছি। এবার নাম আসলে ধান দিতে পারব।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, নতুন করে লটারির ব্যাপারে বুধবার (২২ জানুয়ারি) মন্ত্রনালয়ের চিঠি পেয়েছি। এখনও এই বিষয়ে কমিটির সিদ্ধান্ত হয়নি। পুরনো তালিকায় বাদ পড়া কৃষকদের মধ্য থেকে লটারি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মুন্না বলেন, আবহাওয়া খারাপ থাকায় পুরোদমে ধান সংগ্রহ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে ৭০৩ মেট্রিক টন। ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরনো তালিকায় সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। সেই ক্ষেত্রে শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন হলেও ধান সংগ্রহ করা হবে।

মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জনের লক্ষে আমন চাষিদের তালিকার মধ্য থেকে বাদ পড়া কৃষকদের তালিকা হতে ৩১ জানুয়ারির ভিতরে লটারি করে নতুন কৃষক বাছাই করা হবে। এই ক্ষেত্রে মন্ত্রনালয়ের একটি নির্দেশনা এসেছে। নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই প্রচারণার জন্য উপজেলার সব এলাকায় মাইকিং অব্যহত রয়েছে। নতুন তালিকা আসলে কৃষকদের কাছ থেকে অবশিষ্ট ধান আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে।

প্রসঙ্গত, দুই হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন আমন সংহের লক্ষে গত ২০ নভেম্বর হতে মণিরামপুরে প্রকৃত কার্ডধারী আমন চাষিদের কাজ থেকে লটারির মাধ্যমে ধান ক্রয়ের নির্দেশনা দেয় খাদ্য মন্ত্রনালয়। এক হাজার ৪০ টাকা দরে এই ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই লক্ষে মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস দায়সারাভাবে কৃষকদের একটি তালিকা তৈরি করে বলে অভিযোগ। সেই তালিকা ধরে ২ ডিসেম্বর লটারির মাধ্যমে দুই হাজার ১৫০ জন কৃষক বাছাই করে ক্রয় কমিটি। সেই সংগ্রহ তালিকায় বহু ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রকৃত কৃষকরা ক্ষুব্ধ হন। পরে সরেজমিন তদন্তে অনেক ভুয়া কৃষকের সন্ধান পান গণমাধ্যম কর্মীরা। যা নিয়ে গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।