গুণগতমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে: ইউজিসি চেয়ারম্যান

  • বর্ণাঢ্য আয়োজনে যবিপ্রবি দিবস ২০২০ উদযাপন

পরিমাণ গতশিক্ষার চেয়ে গুণগতমানের শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরীকমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ তিনি বলেছেন, এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। অর্থাৎ কোয়ান্টিটি আছে। কিন্তু গুণগতমানের শিক্ষা নেই। এখন আমাদের গুণগতমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে।

শনিবার দুপুরে যবিপ্রবির ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ একথা বলেন। এর আগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২০ পালন উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কে আল্পনা অংকন, কেক কাটাসহ নানা আয়োজন করা হয়।
শিক্ষাকে বাণিজ্যি করণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ইভিনিং কোর্সবন্ধ করতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট দিতে পারি না। এটা শিক্ষকদের ভূমিকা হতে পারে না। সমাজে শিক্ষকদের সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে গুণগগমানের শিক্ষা ফিরে আসবে। আগের দিনের মতো শিক্ষকদের মান মর্যাদা ফিরে আসবে। যেভাবে আমাদের শিক্ষকেরা সম্মান পেতেন, আমরা সেই ভাবে সম্মান পাবো। এ জন ্যশিক্ষকদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এবিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা গবেষণাকে ফোকাস করছে। যেটা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আমরা জানি উচ্চ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে গবেষণা। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য একজন সফল গবেষক। সুতরাং তিনি জানেন, গবেষণাই হচ্ছে একাডেমিক উন্নয়নের অন্যতম রাস্তা। তিনি সেদিকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

সভাপতির বক্তব্যে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরাজনীতি মুক্তশিক্ষা ও গবেষণা সহায়ক পরিবেশের কারণেই যবিপ্রবি আজকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য আমরা চাকরি চাইবো না, চাকরি দেবো। তিনি বলেন, যে কর্মকান্ড জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের পরিপন্থী, যা সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায়। যে কর্মকান্ড ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেয়, দুর্নীতি-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়-আমি তাকে রাজনীতিই মনে করি না। র‌্যাগিং নামক জঘণ্য মানসিক বৈকল্যকে এবিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে নির্মূল করা হয়েছে। তারপরও র‌্যাগিংয়ের মতো ভয়াবহ ব্যাধিতে কেউজড়িত থাকলে বা সহযোগিতা করলে, তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ এবং সম্মানই হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, প্রশাসনসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য, অ্যালামনাইবৃন্দ এবং সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎকর্ষের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
যশোর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একজন বড়ভাই হিসেবে তোমাদের কাছে অনুরোধ, ভুল বন্ধুদের সংস্পর্শে যাবেনা। মাদকে জড়াবে না। জঙ্গিবাদে জড়াবেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখহাসিনা এগুলোর বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। সুতরাং তোমরা এগুলো থেকে দূরে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব সময় পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যবিপ্রবির ট্রেজারার অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মজিদ, ডিনস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ আনিছুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ ইকবালকবীর জাহিদ, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আহসানহাবীব, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোঃ মীর মোশাররফ হোসেন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি, কর্মচারী সমিতির সভাপতি এস এম সাজেদুর রহমান, সাবেক শিক্ষার্থী সঞ্জয় ব্যানার্জী বাপ্পা, যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা আফিকুর রহমান অয়ন ও সোহেল রানা, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজনিন সুলতানা প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ছাত্র পরামর্শ ওনির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এমসামিউল আলম ও ফারহানা ইয়াসমিন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও মার্কেটিং বিভাগের‘স্মার্ট ক্লাস রুম’ উদ্বোধন করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার, হ্যাচারি অ্যান্ডওয়েট ল্যাব, শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামসহ বিভিন্ন গবেষণার ঘুরে দেখেন।
১৩তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সকল বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় পিঠা উৎসব। হরেক রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে নিজ নিজ বিভাগ তুলে ধরে তাদের সৃজনশীলতা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কে আঁকা হয় মনোমুগ্ধকর আল্পনা। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমন্ত্রিত শিল্পী এবং জনপ্রিয় ওয়ারফেজ ও আভাসের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট। জনপ্রিয় গানের তালে মাতোয়ারা হন দর্শক-শ্রোতারা। পুরো আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করে আইসিটি সেল।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর। উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাজিয়ালী মৌজায় ৩৫ একর জায়গা জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়