আদালতে নয়ন বন্ড ও মিন্নির কাবিননামা

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ মো. আদালতে আরও ৩ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নয়ন বন্ডের বিয়ের রেজিস্ট্রার (কাজী) আনিচুর রহমানসহ আরও দুজন সাক্ষ্য দেন। অপর দুই সাক্ষী হচ্ছেন কামাল ও মিনারা বেগম।

আনিচুর রহমান সাক্ষ্য দেয়ার সময় আয়েশা ও নয়ন বন্ডের বিয়ের কাবিননামা আদালতে উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেছেন, আয়েশার বাবা ও চাচা আমাকে আয়েশার সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিয়ের তথ্য গোপন রাখতে বলেছিলেন। এ সময় জামিনে থাকা আয়েশাসহ ১০ আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিল।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় এজলাসে বসেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান।

জানতে চাইলে কাজী আনিচুর রহমান বলেন, আমি বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শাওন ও মুন্না আমার কাছে এসে বলে, আমাদের বন্ধু নয়ন একটি মেয়েকে ভালোবাসে। তাদের বিয়ে পড়াতে হবে এবং তারা প্রাপ্তবয়স্ক।

তিনি বলেন, ওরা আমাকে বলে, ১৫ অক্টোবর বিয়ে পড়াতে হবে। পরে ওই তারিখে শাওন, মুন্নাসহ ৪-৫ জন ছেলে এসে আমাকে নয়ন বন্ডের বাসায় নিয়ে যায়। ওখানে নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগমসহ ১৪-১৫ জন ছিল। আমি নয়ন বন্ড ও আয়েশার বিয়ে পড়াতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে বাধ্য হয়েছি। আয়েশার পরিবার বিয়েতে রাজি আছে কি না জানতে চাইলে আয়েশা বলে তারা রাজি আছে।

তিনি বলেন, এ সময় উপস্থিত একজন ফোন করে আয়েশার মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় আমাকে। আয়েশার মা আমাকে বিয়ে পড়াতে বলেন। আমি নয়ন বন্ড ও আয়েশার বিয়ে পড়াই, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৪৫/২০১৮। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৫ লাখ টাকা।

কাজী আনিচুর রহমান বলেন, কাবিননামায় আয়েশার পক্ষে সাক্ষ্য দেন জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মুন্না। নয়ন বন্ডের পক্ষে সাক্ষী ছিল রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী ও রাজু। বিয়ে পড়ানোর পর জানতে পারি, আয়েশার আপন চাচা সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু সালেহ। তিনি আমার পূর্বপরিচিত। নয়ন বন্ডের বাসা থেকে নেমে সালেহ কাউন্সিলরকে ফোন করে ঘটনা জানাই। সালেহ আমাকে বিয়ের কথা গোপন রাখতে বলেন। একটু পর আয়েশার বাবা কিশোর আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন পরে জানতে পারি, আয়েশা রিফাত শরীফকে বিয়ে করেছে। আয়েশার বাবা কিশোর আমাকে ফোন করে বলেন- আনিচ আমার মেয়ে আয়েশা ও নয়ন আগামীকাল তোমার কাছে আসবে। তাদের মধ্যে কমিটমেন্ট হয়েছে, তুমি তাদের তালাকের ব্যবস্থা করে দিও। পরের দিন আয়েশা ও নয়ন বন্ড আমার কাছে আসেনি। আয়েশার বাবা পরের দিন আবার আমাকে ফোন করে বলে ওরা কাল যেতে পারেনি। আজ যাবে, তুমি তালাকের ব্যবস্থা করে দিও। কিন্তু ওরা আমার কাছে আসেনি। রিফাত শরীফ খুন হওয়ার পরে আয়েশার চাচা সালেহ আমাকে ফোন দিয়ে নয়ন বন্ড ও আয়েশার বিয়ের তথ্য সাংবাদিকদের দিতে নিষেধ করে।

সাংবাদিক ও প্রশাসনের লোকজন আমার অফিসে গেলে আমি ভয়ে তাদের কাছে আয়েশা ও নয়ন বন্ডের কাবিননামার তথ্য দেই।

কাজী বলেন, একজন মুসলমান মেয়ের একসঙ্গে দু’জন স্বামী থাকতে পারে না।

সাক্ষী কামাল ও মিনারা বেগম আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় রিফাত শরীফকে কোপানের ঘটনাবলি বর্ণনা করেন।

আসামি আয়েশার পক্ষের আইনজীবী কমল কান্তি ও মাহবুবুল বারী আসলাম সাক্ষীদের জেরা করেন।

আসলাম বলেন, কাজী আনিচুর রহমানকে জেরা করেছি। কাবিনটি সঠিক নয়। আমরা কাজীকে বলেছি, আয়েশা ও নয়ন বন্ডের সঙ্গে বিয়ে হয়নি। বাদীপক্ষের লোকজনের চাপে ওই কাবিন সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া কোনো সাক্ষীই রিফাত হত্যার সঙ্গে আয়েশা যে জড়িত, সে বিষয় কিছু বলেনি।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, আয়েশা যে নয়ন বন্ডকে আগে বিয়ে করেছে, সেটা আদালতে কাজী বলেছেন। সেই বিয়ে বলবৎ থাকাকালীন রিফাত শরীফকে বিয়ে না করলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটত না। কাজী সেই সাক্ষ্যই আদালতে দিয়েছেন। সূত্র: যুগান্তর।