ধর্মীয় স্বাধীনতার বার্তা সহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে ভারত আসছেন ট্রাম্প

ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয় সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আলোচনা করতে ভারতে প্রথম সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

এই সফরকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে এলাহিকান্ড। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে তার চলার পথকে।

সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারটায় তার অবতরণ করার কথা রয়েছে আহমেদাবাদে। এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ওব্রাইন, বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রোজ, জ্বালানিমন্ত্রী ড্যান ব্রোলিতে সহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও অন্যরা। তাদেরকে অভিনন্দন জানাতে আহমেদাবাদে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ট্রাম্পের দু’দিনের এই সফরের দিকে এ উপমহাদেশ তো বটেই, একই সঙ্গে তাকিয়ে আছে বাকি বিশ্ব। কারণ, এতে জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্কট সমাধানের বিষয় উত্থাপন করতে পারেন ট্রাম্প। তা ছাড়া রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা দ্বিপক্ষীয় বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতে আসছেন ট্রাম্প। সামনেই নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। অন্যদিকে গত বছর টেক্সাসে ‘হাউডি মোদি!’ ইভেন্টের অল্প কয়েক মাস পরে হচ্ছে তার এই সফর। হাউডি মোদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সম্প্রদায়। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওই সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এবং তাদের উদ্দেশে ট্রাম্প সেখানে ভাষণ দিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদিকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এবার ট্রাম্পের সফরকে পাল্টা প্রতিদান হিসেবে দেখছেন অনেকে। কারণ, এ সময় ভারতের অর্থনীতির অবনমন কাটিয়ে উঠা নিয়ে মোদি যে লড়াই করছেন তাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাইতে পারেন। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য নিয়ে টান টান আলোচনা। ভারতের পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে ভারত। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে টান ধরেছে।

ওদিকে ভারতের উদ্দেশে রোববার রাতে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করার সামান্য আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমরা জমায়েত হবো লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমি চমৎকার ভাল থাকি। তিনি একজন বন্ধু। এর কয়েক ঘন্টা আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইটে ট্রাম্পের সফরকে একটি সম্মান হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি টুইটে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় আছে ভারত। সোমবার তিনি আমাদের সঙ্গে মিলিত হবেন এটা একটা সম্মানের বিষয়। এর শুরু হবে আহমেদাবাদে ঐতিহাসিক কর্মসূচির মাধ্যমে।

দিল্লিতে মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে যে বৈঠক হবে তার দিকে তাকিয়ে আছে সব চোখ। সেখানে আলোচনা হতে পারে দুই দেশের বাণিজ্যিক চুক্তি। শুল্ক প্রত্যাহার বা উচ্চ হারে শুল্ক নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বৃহৎ এই দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে সম্পর্ক ম্লান হয়েছে। তা এড়িয়ে একটি আশা জাগানিয়া চুক্তির আশা করছেন অনেকে। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে বহু কোটি ডলারে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিনছে ভারত। এমন এক সময়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হবে মোদির। ওই অস্ত্র সেনা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টান ধরেছে।

আহমেদাবাদে নবগঠিত সরদার বল্লভভাই প্যাটেল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ ট্রাম্পের অভ্যর্থনা হবে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেখানে ভারতের সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যে ভরা সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। ‘হাউডি মোদি!’র আদলে সেখানকার অনুষ্ঠানকে দেখা হবে ‘নমস্কে ট্রাম্প’- এমন কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার।

নমস্তে ট্রাম্প ইভেন্টে ট্রাম্পের গাড়িবহর যে পথ দিয়ে যাবে আহমেদাবাদের সেই সরদারনগর এলাকায় সেই পথের পাশেই রয়েছে বেশ কিছু বস্তি। ট্রাম্পের চোখের আড়ালে রাখার জন্য ওই বস্তিগুলো এবং সড়কের মাঝে ৫০০ মিটার দীর্ঘ ও চার ফুট দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের চোখ থেকে দরিদ্রদের আড়াল করছে সরকার।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই নেতা যেসব বিষয়ে আলোচনা করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে একান্তে আলোচনা করবেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে যখন বিক্ষোভ চলছে তখনই ট্রাম্প এই সফরে আসছেন। রোববার রাতেও এমন দুটি বিক্ষোভে সহিংসতা হয়েছে।

আহমেদাবাদ থেকে ট্রাম্প ও তার পরিবার যাবেন আগ্রায়। সেখানে তারা তাজমহল পরিদর্শন করবেন। এ জন্য কর্তৃপক্ষ যমুনা নদীতে বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়েছে। যাতে তাজমহল ছুঁয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের দিল্লিতে একটি সরকারি স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ওই সময়ের অনুষ্ঠান থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও উপমুখ্যমন্ত্রী মানিষ সিসোদিয়াকে আমন্ত্রণ না জানানোর পর এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ভারত সফরের সময় ট্রাম্প ও তার পরিবার থাকবেন দিল্লিতে আইটিসি মাউরিয়া হোটেলে। ওই হোটেলকে তিন স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। আশপাশের মোতায়েন করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা।