খাগড়াছড়িতে বিজিবি গ্রামবাসী সংঘর্ষ, বিজিবি সদস্যসহ ৬ জন নিহত

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষে এক বিজিবি সদস্যসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৪ জন রয়েছেন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজিনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ৪০ বিজিবি খেদাছড়া জোনের সিপাহি শাওন, সাহাব মিয়া (মুছা), মো. আহমেদ আলী (২৮), আলী আকবর। এছাড়া স্বামী ও সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে সাহাব মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম স্ট্রোক করে মারা যান।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে গুলিবিদ্ধ দুজনের মধ্যে মো. মফিজ মিয়া মারা যায়। মো. হানিফ সহ আরও ১ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, বাগান মালিক সাহাব মিয়া সকালে তার নিজের বাগান থেকে বেশকিছু গাছ কাটেন। গাছগুলো গাড়িযোগে নেয়ার সময় অবৈধ দাবি করে বিজিবি সদস্যরা জব্দ করে তাদের হেফাজতে নিতে চায়।
একপর্যায়ে পুরো এলাকাবাসী সমবেত হয়ে বিজিবি সদস্যদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় বিজিবি সদস্যরা জড়ো হওয়া লোকদের নিয়ন্ত্রণে গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই বিজিবি সদস্য শাওন, বাগান মালিক সাহাব মিয়া প্রকাশ মুছা (৫৭), সাহাব মিয়ার ছেলে আহম্মদ আলী, স্থানীয় ব্যক্তি মো. আলী আকবর নিহত হয়।
নিজের স্বামী ও সন্তানের মৃত্যু সংবাদ শুনে সাহাব মিয়ার স্ত্রী রঞ্জু বেগম স্ট্রোক করে মারা যান।

মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র সামছুল হক ৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা কোন মাদক কারবারের জন্য নয়। সামান্য একটি কাঁঠাল গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ও হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। একটি কাঁঠাল গাছের জন্য নিরপরাধ ব্যক্তিদের জীবন দিতে হলো যা খুবই দুঃখজনক।

মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুদ্দিন ভুঁইয়া সংঘর্ষে ৪ জন এবং চমেকে নেয়ার পথে ১ জনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় স্ট্রোক করে আরও ১ জন মারা গেছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
তবে এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘটনার পর বিকেল ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দিন, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সামছুল হক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. হুমায়ুন মোরশেদ খান।

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে এ ঘটনায় আমরা ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি স্থানীয়দের আশ্বাস দেন। সূত্র: মানবজমিন।