তিনদিক থেকে বিপদের সম্মুখীন ভারত : মনমোহন সিং

monmohon sing

সাম্প্রদায়িক সমস্যা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য মহামারীর প্রকোপ, বর্তমানে এই ত্রিমুখী সমস্যায় জর্জরিত ভারত। এগুলো নিয়ন্ত্রণে মোদি সরকার ব্যর্থ হওয়ায় এর ফলে বিপদের সম্মুখীন ভারত। এমনই আশঙ্কাবাণী শোনালেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

গতকাল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জাতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ প্রত্রিকায় তার একটি কলামে লেখেন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্বজুড়ে মহামারীর এই ত্রিভ‚জ ভারতের আত্মাকে ক্ষত বিচ্ছিন্ন করে দেবে।

নিজের লেখায় মনমোহন সিং দিল্লিতে ঘটা সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি লেখেন, আমাদের সমাজের কিছু বিশৃঙ্খল মানুষ এই ঘটনার জন্য দায়ি। পাশাপাশি রাজনৈতিক বহু নেতাও এই বিশৃঙ্খল মানুষদের দলে পড়ে। এরা সম্মিলিত ভাবে সাম্প্রদায়িক এই হিংসার আগুনে ঘি ঢেলেছে।

পাশাপাশি গত কয়েক মাসে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসগুলিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি লেখেন, ‘ভারতে ইতিহাসের অন্ধকার কালকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে গত কয়েক মাস। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পাবলিক প্লেস এবং বাড়ি-ঘরেও হিংসাত্মক সাম্প্রদায়িক উস্কানি বয়ে চলেছে। আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানগুলি নাগরিকদের সুরক্ষা না দিয়ে নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছে। ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠান এবং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ, মিডিয়াও আমাদের হতাশ করেছে।’

অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এরকম সামাজিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প শুরু করতে রাজি নয় এবং তাদের ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছাও হারিয়েছেন। সামাজিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কেবল তাদের ভয় আরও বাড়িয়ে তুলেছে।’

মনমোহন লেখেন, ‘সত্যটি হল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত মারাত্মক। আমরা যে ভারতকে জানি এবং লালন করি সেই ভারত দ্রুত পিছলে পড়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে ঢাকা হচ্ছে। জাতি হিসাবে আমরা যে গুরুতর ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছি সেগুলির সমাধান করার সময় এসেছে।’ এছাড়া ভারতে করোনা আতঙ্কের কথাটিও উঠে আসে তার লেখায়।

তিনি মোদি সরকারের জন্য একটি তিন দফা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। প্রথমত, করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর সঙ্গে যুঝতে সব রকমের প্রস্তুতি রাখা উচিত এবং এই রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত শক্তি ও প্রয়াস প্রয়োগ করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, দেশে তৈরি হওয়া বিদ্বেষের পরিবেশ থামাতে এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত বা এই আইনে ফের সংশোধনী আনা উচিত।
তৃতীয়ত, দেশের অর্থনীতিকে পুনরজ্জীবিত করার জন্যে একটি বিশদ ও চুলচেরা আর্থিক পরিকল্পনা করা উচিত। সূত্র : বিবিসি নিউজ।