করোনা রুখতে রাজ্যবাসীর উপর কড়া নজর, মোবাইলের সিগন্যাল ট্র্যাক করছে সরকার

লকডাউন অবস্থাতে কোন ব্যক্তি নিজের এলাকার ১০০ মিটার রেডিয়াসের বাইরে ও হোম কোয়ারানটিনের শর্ত ভেঙে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন, তাহলে আপনার ফোনে চলে আসবে সতর্কবার্তার মেসেজ। সেই মেসেজ দেখেও যদি আপনি সতর্ক না হোন, তাহলে আপনার বাড়িতে হাজির হবে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। বিনা বাধায় গ্রেফতার করতে পারেন আপনাকে।

এমনই কঠোর পদক্ষেপ নিল অন্ধ্র প্রদেশের সরকার। জানা গিয়েছে, মোবাইলের টাওয়ার সিগন্যাল ট্র্যাক করে নাগরিকের গতিবিধির উপর নজর রাখবে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি, করোনার মোকাবিলা করতে সারা দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ঘোষণাকে পাত্তা না দিয়ে অনেকেই করোনাকে হাল্কাভাবে নিচ্ছেন। বাজার, রাস্তায়, অলিতে গলিতে অবাধ যাতায়াত করছেন অনেকেই। বিদেশ থেকে ফিরিয়েও হোম কোয়ারানটিনের শর্ত মানছেন না অনেকেই। ফলে তাঁদের এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য আশাপাশে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এই মারণ ভাইরাস। এইভাবে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞ ও সরকারের কথায়, এই দুসপ্তাহ দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত কঠিন সময়। এই সময়টাকে অতিক্রম করতে পারলেই আকটানো যেতে পারে গোষ্ঠী সংক্রমণ। আর সেই চেষ্টায় ত্রুটি রাখছেন কোনও রাজ্য সরকারও। তবে অনেকেরই এই উদাসীন মনোভাবকে কাটাতে এক নয়া পদক্ষেপ নিল অন্ধ্র সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডর ও মোবাইল টাওয়ার সিগন্যালের সাহা্যে রাজ্যের প্রত্যেক বাসিন্দাদের ফোন ট্র্যাক করা হচ্ছে। হোম কোয়ারানটিনে থাকা মানুষদের তো বটেই, লকডাউনের শর্ত ভেঙে যারা বাইরে বের হবেন, তাঁদেরও ট্র্যাক কর হবে। বিদেশ থেকে ফিরেছেন যাঁরা, তাঁদের অনেকেই ট্রাভেল হিস্ট্রি গোপন করেছেন, তাঁদেরও মোবাইল টাওয়ার ট্র্যাক করা যাবে একই সময়ে।

কোভিড অ্যালার্টিং ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে চলবে এই মহত্‍ কাজ। এলাকায় মোবাইলের টাওয়ার দেখে ব্যক্তির গতিবিধির উপরও নজর রাখতে চলেছে এই সরকার। এখনও পর্যন্ত ২৯হাজার বাসিন্দা হোম কোয়ারানটিনে রয়েছেন। তাঁদের মোবাইল নম্বর মনিটর করা হয়েছে। বিশেষ নজর রাখা হয়েছে তাঁদের গতিবিধির উপর।

রাজ্যের মেডিক্যাল বুলেটিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ২৯,৪০৫জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। এই বিশেষ পদক্ষেপের আওতায় অন্তর্ভুক্ত সব জেলাকেই এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। জেলারা আধিকারিকরাও গ্রামের বাসিন্দাদের গতিবিধির উপর নজর রাখার চেষ্টা করছেন। প্রসঙ্গত, জেলা আধিকারিকদের কথা মতো কোনও ব্যক্তি যদি সেই নির্দেশ অমান্য করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়াও এই সিস্টেমের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় রেড জোন হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত কোন ব্যক্তি যদি এলাকা ও বাড়ির বাইরে ১৫ মিনিটের বেশি থাকেন, তাহলে সেই এলাকা রেড জোন হিসেবে দেখাতে থাকবে এই সিস্টেম। সেই এলাকা স্যানিটাইজড করা আবশ্যিক, এই সংকেতও দিতে থাকবে সেটি। এইভাবে ছড়িয়ে পড়বে গোষ্ঠী সংক্রমণ। ফলে ভারত চলে যাবে করোনার তৃতীয় স্টেজে।

প্রসঙ্গত, ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত দু-হাজারের দিকে এগোচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১,৩৯৭। মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ৩৫। যদিও বেসরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬১৬। মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের।