আঙিনা

শিল্প শব্দটি তিনটি বর্ণে আবৃত, কিন্তু এর ব্যাপকতা কত বৃহৎ তা লিপিবদ্ধকরণ কিংবা আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। বলা য়ায়,অমিমাংসিত একটি বিষয়।মানবজীবনের স্তরে স্তরে সজ্জিত রয়েছে শিল্প,তা শুধু চিত্তবোধ,ও আত্নসমীকরণ-এর সূত্র সুক্ষ্মভাবে মেলানোই শিল্পরসিকের প্রধান উপজীব্য বিষয় হয়ে ওঠে।মানব জীবনের প্রতিটি স্তর যেহেতু শিল্পের অংশ, তেমনি যাপনের প্রতিটি উপাদানও শিল্পের উপকরণ, তাই কোন উপাদানটি কোন স্থানে সঠিকভাবে স্থাপন করা ও তার নন্দনগুণ বিচার করাই শিল্পীর কাজ হয়ে ওঠে।সেই অর্থে সকলেই অল্পবিস্তর শিল্পবোধ নিয়ে ধরণীর মাটি স্পর্শ করে থাকে। শিল্পী ধরণীর সুবিশাল অংশকে নিজের করে নেন। নিজের স্থানটিকে নান্দনিক রূপ যেটা দিতে পারে সেটায় হয়ে ওঠে নন্দনবোধ সম্পন্ন জীবনের প্রতিপাদ্য বিষয়।

এই ভূখণ্ড কে সবচেয়ে বেশি নান্দনিক করে তুলতে পারে নান্দনবোধ সম্পন্ন মানুষ। রূপদান করে শিল্পরূপে, যাপনের উপাদানসমূহকে। যাপিত উপকরণসমূহ কোনদিক থেকে দেখলে শিল্পরূপে হাজির হবে তা নিয়ে হমোসেপিয়ান্স থেকে বিশ্বায়ন যুগের মানুষরাও নানা গবেষণা, অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ফলাফলগুলোকে সময়ের ফ্রেমে বন্দি করে নানা ইজম নামে ভাগ করেছে,কিন্তু বরাবরই কিছু প্রশ্ন কিছু উত্তর মেলাবার চেষ্টা তা তাদের কর্মের মধ্যে স্পষ্ট।

শিল্প একটি সময় বর্ণ, রেখা বা কাদা মাটির তৈরী ফর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল,ভাষ্কর্য বা চিএের মধ্যেই সিমাবদ্ধ ছিল শিল্পকলা। কিন্তু চিন্তার, প্রয়োগ তো কোন বদ্ধতা মানে না,ফলত যাপনের উপকরণ গুলো শিল্পবস্তুতে পরিণত হয়। শিল্পী ও সীমাবদ্ধতাকে উতরে বৃহৎ ভূখণ্ডে তার চিন্তার ফসল ফলায়, হয়ে ওঠেন বৃহৎ স্থাপনা। শিল্পরূপে স্থাপনাশিল্পে শিল্পরসিকদের সামনে হাজির হন।

একদল শিল্পরসিক সৃষ্টিতে মত্ত, এই ধরণীর একটি ভূখণ্ডে এসে হাজির এবং ভূখণ্ডে অধিষ্ঠিত হয়ে, কথোপোকথন শুরু করে এবং সহযাত্রিদের একইস্থানে হাজির করতে চায় সেই স্থানটি উঠান,শিল্পের উঠান শিল্পির আঙ্গিনা।বিস্তৃত সে আঙ্গিনা গগণ থেকে জমিন পর্যন্ত, উঠানের শিল্পিদের চিন্তা ও বিস্তৃতি গগণের মতই,তা তাদের চিন্তার প্রাথমিক প্রয়োগ দেখেই মনে হচ্ছে, লাল বর্ণে ঘেরা পোড়া মাটির নির্মাণ স্থানটিকে বেছে নেয়,ইট নির্মাণ শ্রমিক দের জীবন, তাদের কাঁচা মাটিকে ফর্মে ফেলে লাল বর্ণে রূপান্তর এর কৌশল ও তাদের জীবনের সাদা কালো কিংবা রঙিন অধ্যায়গুলোর সাথে নিজেদের যাপিত জীবনকে একাকার করে শিল্পীরা এক চিন্তাবেষ্টিত নান্দনিক শিল্পে রূপান্তর ঘটিয়েছে তা স্পষ্ট।

উঠানের শিল্পীরা সময়কে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পসৃষ্টিতে প্রয়াসী বলে মনে হচ্ছে। তাদের জীবনের টুকরেো সময়কে এই লাল বর্ণে র সাথে মিশেল ঘটিয়েছে । চিঠির খাম, পলিমাটির রূপান্তর, ইট পোড়ানোর স্থানটিকই নিজের বাসস্থান এ রূপান্তর কিংবা লাল ইটের ওপর নির্মাণশ্রমিকের মুখাবয়; আবার নিজের সৃষ্টিকর্মের স্থান হয়ে দাঁড়ায় এই লাল বর্ণ ঘেরা মাটি নির্মাণ বিনির্মাণের স্থানটি।

পোড়ামাটির গন্ধ ও বর্ণে নিজের একাকার করে সৃষ্টিতে মত্ত উঠানের শিল্পীগণ। নিজেদের সৃষ্টিতে মত্ত শিল্পীগণের সৃষ্টিতে, ইট শ্রমিকদের লালবর্ণের পেছনে ধুসর জীবনের গল্প খানিকটা অস্পষ্ট, সময়ে হয়তো আমাদের সামনে হাজির করবে উঠানের শিল্পীরা, নানা প্রশ্ন, তার উত্তর নানা শিল্প গবেষণার ফসল এনে জড়ো করবে উঠানে,তার প্রতিক্ষায় আমরা।

লেখক: চিত্রকর