হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে রয়েছে যে ঝুঁকিগুলো

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হাত পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সেক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান উপায় হল সাবান-পানিতে বিশ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ধোয়া। দ্বিতীয় ও সুবিধাজনক উপায়টি হল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার। কিন্তু অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারেরও বেশ কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। চলুন তার আগে জেনে নেওয়া যাক হ্যান্ড স্যানিটাইজার সম্পর্কে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার কী?

পানি ও সাবান ব্যতীত হাত পরিষ্কার করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিটি হল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। এটা এক ধরনের তরল যা হাতের জীবাণুকে দ্রুত ধ্বংস করে দেয়। সহজ, দ্রুত, অল্প সময়ের মাঝে যেকোন স্থানেই পানি ছাড়াই হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেশ জনপ্রিয়।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার মূলত দুই ধরনের হয়- নন-অ্যালকোহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজার। নন-অ্যালকোহল হ্যান্ডস্যানিটাইজারে ব্যবহার করা হয় বেনজাল্কোনিয়াম ক্লোরাইড (benzalkonium chloride) নামক এক ধরনের নন-অ্যালকোহলিক উপাদান। যা দাহ্য পদার্থ নয় এবং নন-টক্সিক। কিন্তু গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন নন-অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণু ধ্বংসে খুব একটা কার্যকরী নয়।

অন্যদিকে অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ব্যবহার করা হয় ইসপ্রোপ্যানল, এন-প্রপ্যানল ও ইথানলের মাঝে যে কোন দুইটি উপাদানের মিশ্রণ। অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারটি সাধারণত জনসাধারণ ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের মাঝে ব্যবহারের প্রচলন বেশি। এদিকে গবেষণা মতে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল উপস্থিত থাকা হ্যান্ডস্যানিটাইজার জীবাণু ধ্বংসে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে কী ঝুঁকি দেখা দিতে পারে?

বেশিরভাগ হ্যান্ড স্যানিটাইজারে থাকে উচ্চ মাত্রার এথানল ও ইথাইল অ্যালকোহল। যা বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোবস থেকে হাতকে রক্ষা করে। ইথাইল অ্যালকোহল এক ধরনের বর্ণহীন দাহ্য তরল, যা এক ধরনের হালকা কটু গন্ধ ছড়ায়। মূলত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের সময় ঘরোয়া সাধারণ তাপমাত্রায় বাতাসে মিলিয়ে যায়। কিন্তু আগুনের আশেপাশে গেলেই আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি থাকে।

এছাড়া অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারে থাকে অ্যাকটিভ উপাদান ট্রাইক্লোসান যা TCS নামে পরিচিত। এটা এক ধরনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল উপাদান। সাবান, টুথপেস্ট, ডিওডরেন্ট ও ক্রিমে যা বহুল ব্যবহৃত। এটা যেহেতু জীবাণু ধ্বংসে কার্যকর উপাদান, অতিরিক্ত ব্যবহারে হাতের ত্বকের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়।

উপরোক্ত সমস্যা দুইটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ক্ষেত্রে প্রধান দুইটি সমস্যা। এছাড়াও যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে-

১. হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কঠোর কেমিক্যাল উপাদা ত্বকে জ্বালাপোড়াভাব ও চুলকানির উপদ্রব ঘটাতে পারে।

২. অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকের উপরের অংশের চামড়া উঠে আসার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩. ইউভি রশ্মিতে (সূর্যের আলো) ত্বকে সমস্যা ও জ্বালাপোড়া তৈরি করতে পারে।

৪. ট্রাইক্লোসান ত্বকের গভীরে গিয়ে রক্তে মিশে অ্যালার্জিরা প্রাদুর্ভাব তৈরি করতে পারে।

৫. হ্যান্ড স্যানটাইজারের কেমিক্যাল উপাদান সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

এ সকল কারণে গবেষকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন সাবান-পানিতে হাত ধোয়া সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি জীবাণু ও করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকার জন্য। পানি হাতের কাছে না থাকলে ও অত্যন্ত প্রয়োজন হলে তবেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।