দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথা জানা যায় ৮ মার্চ। এরপর দেড়মাস কেটে গেছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে মহামারী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে ৫৮টি জেলায়। আক্রান্ত মোট ৩ হাজার ৭৭২ জন রোগীর মধ্যে ১৪৭০ জনই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা। যা শতাংশের হিসাবে প্রায় ৪৬ শতাংশ। এছাড়াও ঢাকা সিটির বাইরে ঢাকা জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও রয়েছের প্রায় ৫২ জন করোনারোগী।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণেও স্বাভাবিকভাবেই আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগেই। এ বিভাগের ১৩টি জেলাতেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে। দেশের আক্রান্ত মোট রোগীর ৮৫ দশমিক ২৬ ভাগ রোগীই এ বিভাগের। বিভাগটির অন্যান্য জেলার মধ্যে চারটি জেলাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস; জেলাগুলো হল- নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘শতকরা হিসেবে মোট আক্রান্তের বেশিরভাগই ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ঢাকা শহরে, বাকি অর্ধেক নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা মিলিয়ে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলার করোনা সংক্রমণের আপডেট জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫০৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৬৪ জন, বাকিরা বিভিন্ন উপজেলায়। নারায়ণগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৫ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৬ জন ‘
এছাড়াও বিভাগের অন্যান্য জেলার মধ্যে গাজীপুরে ২৬৯ জন, কিশোরগঞ্জ ১৪৬ জন, মাদারীপুর ২৭ জন, মানিকগঞ্জ ৯ জন, মুন্সিগঞ্জ ৬১ জন, নরসিংদী ১৩৬ জন, রাজবাড়ী ৯ জন, ফরিদপুর ৬ জন, টাঙ্গাইল ১৫ জন, শরিয়তপুর ১১ জন এবং গোপালগঞ্জে ৩৫ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।
ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। বিভাগটির ১১টি জেলার মধ্যে ৯টি জেলায় মোট ১৪২ জন রোগী রয়েছেন, যা সারাদেশের শতকরা হিসাবে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বিভাগটির দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। আক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে ৪২ জন, কক্সবাজারে পাঁচজন, কুমিল্লায় ২৭ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ২৫ জন, বান্দরবানে ও নোয়াখালীতে ৪ জন করে, ফেনীতে ৩ জন এবং চাঁদপুরে ১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এরপরেই বেশি আক্রান্ত রয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগে। বিভাগটির চারটি জেলায় ১৩৩ জন আক্রান্ত রয়েছেন; যা সারাদেশের শতাংশের হিসাবে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর ময়মনসিংহে রয়েছে ৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী। এছাড়াও জামালপুরে ২৯ জন, নেত্রকোনায় ৩৩ জন এবং শেরপুরে ১৯ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এরপর মোট আক্রান্তের ২ দশমিক ১০ শতাংশ রোগী রয়েছে বরিশালের ৫টি জেলায়। এ বিভাগে মোট ৭১ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছেন। বিভাগের ভোলা জেলা এখনো করোনামুক্ত রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জেলার মধ্যে বরগুনায় ১৭ জন, বরিশালে ৩৪ জন, পটুয়াখালীতে ১০ জন, পিরোজপুর এবং ঝালকাঠিতে পাঁচজন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এরপরেই আক্রান্তের দিক থেকে এগিয়ে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগের গাইবান্ধায় শুরুর দিকেই ক্লাস্টার (একই এলাকায় কম দূরত্বে একাধিক আক্রান্ত) পাওয়ার কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এখন পর্যন্ত বিভাগটিতে ৬০ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। যা মোট আক্রান্তের ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিভাগের ৮টি জেলাতেই করোনারোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রংপুরে ৯ জন, গাইবান্ধায় ১৩ জন, নীলফামারীতে ১০ জন, লালমনিরহাটে দুজন, কুরিগ্রাম ৩ জন, দিনাজপুরে ১৩ জন, পঞ্চগরে দুইজন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বাকী তিন বিভাগ রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায় আক্রান্তের হার ১ শতাংশের নিচে। এই তিন বিভাগের মধ্যে রাজশাহী বিভাগের একটি এবং খুলনার দুটি জেলায় এখনো করোনা সংক্রমিত হওয়া রোগী শনাক্ত হননি। এই জেলাগুলো হল রাজশাহী বিভাগে নাটোর এবং খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরা জেলা। গতকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাবে রাজশাহী বিভাগে ২৫ জন, সিলেটে ২০ জন এবং খুলনায় ২৪ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দেশের সবচেয়ে কম আক্রান্ত বিভাগ খুলনা, শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ।
দেশে গতকাল পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, মোট ৩২ হাজার ৬৭৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৭২ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১২০ জন মানুষ, যা প্রায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত সুস্থও হয়েছেন ৯২ জন; যা মোট আক্রান্তে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। দেশের করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশ পুরুষ, ৩২ শতাংশ নারী।
বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে আক্রান্তদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের বয়সসীমার ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি ২৪ শতাংশ। এছাড়া ৩১ থেকে ৪০ বয়সসীমায় ২২ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের বয়সসীমায় ১৮ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের বয়সীসীমার ১৫ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব আছেন ১০ শতাংশ। এছাড়াও শিশুদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী আছে ৩ শতাংশ আর ১১ থেকে ২০ বছরের বয়সসীমার রয়েছে ৮ শতাংশ আক্রান্ত রোগী।