নেপালের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ সহযোগিতা ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কৌশলের আহ্বানপ্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের প্রতিনিধি সভার ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানা সৌজন্য সাক্ষাত করেন | ছবি: প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মধ্যে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জলবিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও সড়ক সংযোগে সীমান্ত পেরিয়ে সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সোমবার (১২ মে) নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের প্রতিনিধি সভার ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ইন্দিরা রানা বর্তমানে ঢাকায় নিযুক্ত নেপাল দূতাবাস আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
অধ্যাপক ইউনূস যৌথ অবকাঠামো ও জ্বালানি উদ্যোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের জন্য একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। ”
তিনি বলেন, “আলাদাভাবে নয়, একসাথে কাজ করলেই আমাদের লাভ বেশি। ”
সাক্ষাতে আলোচনার প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল জলবিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সহযোগিতা। গত অক্টোবরে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-নেপাল-ভারত ত্রিপাক্ষিক বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়, যার মাধ্যমে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে—দুই পক্ষই বৃহত্তর পরিসরে এমন আরও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসারে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “রংপুরে আমাদের আসন্ন ১,০০০ শয্যার হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের রোগীদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে। আমরা আঞ্চলিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও যৌথ উন্নয়নে বিশ্বাস করি। ”
নেপালের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানা বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের সব সংসদ সদস্যই বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চান। আমরা অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব জোরদার এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ”
ডেপুটি স্পিকার বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কথা তুলে ধরেন, যাদের সংখ্যা বর্তমানে ২,৭০০-এরও বেশি এবং যারা মূলত মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়াশোনা করছেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার মানের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে আরও শিক্ষা বিনিময় ও একাডেমিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
দুই দেশের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নেপালের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলে এই অঞ্চলে মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে এবং ব্যবসায়িক খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান।