যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ ২৮ কর্মী কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। বুধবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের জারি করা অফিস আদেশে জানানো হয় ১১ চিকিৎসক, ১১ নার্সসহ মোট ২৮ কর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো ডাক্তার, নার্সসহ অন্য কর্মীরা করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীদের কনটাক্টে এসেছিলেন। এই ২৮ জনকে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই হাসপাতালের সব জনবলকে পরীক্ষার আওতায় আনা হবে।
আজ বুধবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ফলাফলে সদর উপজেলার যে ৪টি নমুনা পজেটিভ বলে শনাক্ত হয়েছে, তার সবগুলোই যশোর জেনারেল হাসপাতাল কানেকটেড। ডাক্তারসহ ২৮ জনবলকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর নির্দেশ মঙ্গলবার স্বাক্ষর করা হয়। তবে তা আজ বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৩ এপ্রিল যশোর জেনারেল হাসপাতালে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এলাকা এবং ঝিকরগাছার দুই রোগী ভর্তি হন। একজন ছিলেন করোনারি কেয়ার ইউনিটে, অন্যজন মেডিসিন ওয়ার্ডে। দুইজনই তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষণ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরো কয়েক রোগীর সঙ্গে ওই দুইজনের নমুনা নিয়ে ২৬ তারিখ পরীক্ষাগারে পাঠান। ২৭ এপ্রিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেনোম সেন্টার থেকে যে রিপোর্ট আসে, তাতে উল্লিখিত দুই ব্যক্তি করোনা পজেটিভ বলে চিহ্নিত হন। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে করোনারি কেয়ার ইউনিট ও মেডিসিন ওয়ার্ড লকডাউন করে দেন। গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট দুটি জীবাণুমুক্ত করার পদক্ষেপও নেওয়া হয়। ওই দুই স্থানে চিকিৎসাধীন রোগীদের স্থানান্তর করা হয় অন্য ওয়ার্ডে।
কিন্তু ইতিমধ্যে ওই দুই রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন বেশ কিছু ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী। তাদের শনাক্ত করে হাসপাতাল প্রশাসন কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
যে ১১ ডাক্তারকে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এবিএম সাইফুল আলম, কার্ডিওলজির জুনিয়র কনসালটেন্ট তৌহিদুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার মো. মাহামুদুল হাসান পান্নু, সহকারী রেজিস্ট্রার খালিদ শামস মো. শাহেদ জামীল, ইন্টার্ন ডাক্তার রুবেল, আজিজুর, প্রদীপ, রাজেশ, হৃদি, অর্পণ এবং সাজেদুল।
কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ১১ জন নার্সকেও। আরো রয়েছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়ার্ড বয় ও আয়া মিলিয়ে ৬জন।
এদিকে, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার থেকে যে ১১ করোনা রোগী শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে চারজন যশোর সদর উপজেলার। এই চারজনই জেনারেল হাসপাতাল কানেকটেড। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন চিকিৎসকের স্ত্রী (৩৫)। ওই চিকিৎসক আগেই করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। পরে তার স্ত্রীকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। যদিও এই নারীর শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। আক্রান্তদের আরেকজন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিয়ন। শনাক্ত হওয়া অন্য দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, এর মধ্যে একজন সাংবাদিক। এই চার ব্যক্তির বাড়ি আজ বুধবার দুপুরেই লকডাউন করেছে প্রশাসন।