যশোরে পুলিশের নির্যাতনে কলেজছাত্রের দুটি কিডনি অকেজো হওয়ার অভিযোগ

যশোরে ইমরান হোসেন (২০) নামে এক কলেজছাত্রকে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর অবস্থায় শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার দুটি কিডনিই অকেজো হওয়ার পথে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর ছেলে। তিনি সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

সোমবার নির্যাতনের বিষয়টি জানাজানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ দেখে দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছিল। তাকে উদ্ধার করে পিতার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনা গত ৩ জুনের। এতদিন পর কেন অভিযোগ করছে সেটি বোধগম্য নয়। তবুও অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। নির্যাতনের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

আহত ইমরানে পিতা নিকার আলীর অভিযোগ, গত ৩ জুন বুধবার সন্ধ্যায় তিনি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে এক সঙ্গীসহ বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাজিয়ালি ফাঁড়ির পুলিশ তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে। এ সময় ভয়ে ইমরান দৌঁড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে বেধড়ক মারপিট করে। পরে ইমরান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটি ফার্মেসিতে নিজেকে দেখতে পান তিনি। এ সময় পুলিশ পকেটে গাঁজা দিয়ে তার বাবার কাছে ফোন করে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ছয় হাজার টাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর বেসরকারি কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশের দাবি প্রসঙ্গে নিকার আলী বলেন, তিনজন পুলিশ আমার ছেলেকে মেরে অজ্ঞান করেছিল। পরে পুলিশ আমার ছেলের ফোন নম্বর থেকে কল করে বলে আপনার ছেলে অসুস্থ নিয়ে যান। পর ফাঁড়ি থেকে ছয় হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। এখন বাঁচার জন্য পুলিশ ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে পারে। আমরা কেন মিথ্যা অভিযোগ করবো পুলিশের বিরুদ্ধে।

নির্যাতিত ইমরান দাবি করেন, মারপিটের ঘটনা কাউকে জানালে ফের আটক করে রিমান্ডে নিয়ে পেটানো হবে-এমন হুমকিতে ভয়ে কাউকে কিছু বলেননি। এরপর তিনদিন পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলে সহ্য করতে না পেরে বাবা মাকে জানান। এর পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ইমরান হোসেনকে চিকিৎসা দেয়া যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল সাংবাদিকদের বলেন, ইমরানের কিডনির অবস্থা বেশ খারাপ। কিডনির ক্রিয়েটিনিন এক দশমিক ৪ এর মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু এটি বেড়ে ৮ দশমিক ৮। এটি আরও বাড়ছে। দ্রুত ডায়ালাইসিস করতে হবে। তারপরও কতটুকু রিকভারি করবে বলা মুশকিল।

সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুন্সি আনিচুর রহমানের দাবি, ঘটনার দিন সকালে তিনি জরুরি কাজে কোতোয়ালী থানায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন। এসে জানতে পারেন এএসআই সুমারেশ সাহা ও সাজদার রহমানসহ চারজন কনস্টেবল ওই কলেজছাত্রকে আটক করেছেন। কিন্তু সে অসুস্থ হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে ছাড়তে কোনো টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।