রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করা হলো যশোর জেলা

jessore map red yellow green zone

সোমবার (১৫ জুন) যশোর জেলায় ৬টি উপজেলার ১৭টি এলাকাকে রেড জোন (সম্পূর্ন লকডাউন) ঘোষণা করা হয়েছে। আর ৭টি উপজেলার ১৭টি এলাকাকে ইয়োলো জোন (আংশিক লকডাউন) ও জেলার সকল উপজেলার (৮ উপজেলার) ১২১টি এলাকাকে গ্রিন জোন ঘোষণা করেছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

করোনাভাইরাসের চলমান ঝুঁকি বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকা লাল, হলুদ ও সবুজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা ও সেখানে রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করে এসব জোন নির্ধারণ করেন। গত ১৪ দিনে যেসব এলাকায় প্রতি লাখে ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে সেসব এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সোমবার এই সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়েছেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন। একই দিন অনুলিপি যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফকে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জোনভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনের এই ঘোষণা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।

যশোর জেলাকে পুরোপুরি তিন জোনে বিভক্ত করা হলো৷ এর মধ্যে রেড জোন পুরো লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ইয়োলো জোন আংশিক লকডাউন হবে। গ্রিন জোনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন যাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।

১৫ জুন সোমবার বিকেলে এই মর্মে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছেন জেলা প্রশাসক ও ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, ও সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।

রেড জোনভূক্ত এলাকার মধ্যে পড়েছে শহরের ৩ নাম্বার ওয়াডর্ (ঘোপ), নতুন উপশহর ও শহরতলীর আরবপুর ইউনিয়ন। এড়াছা অভয়নগরের নওয়াপাড়া শহরের দুই, চার, পাঁচ, ছয় ও নয় নম্বর ওয়ার্ড, চৌগাছা শহরের ছয় নম্বর ওয়ার্ড, বেনাপোল পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড, ঝিকরগাছা পৌরসভার দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ড ও কেশবপুর পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড রেড জোনভুক্ত হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলের মধ্যে অভয়গর উপজেলার চলিশিয়া, পায়রা ও বাগুটিয়া ইউনিয়ন, শার্শা সদর ইউনিয়ন রেড জোনে পড়েছে।

রেড জোনভুক্ত এলাকাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সব এলাকায় গেল দুই সপ্তাহে এক থেকে ২০ জন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন।

ইয়োলো জোনভুক্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে যশোর পৌরসভার ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড, সদর উপজেলার কাশিমপুর ও ফতেপুর ইউনিয়ন।
মণিরামপুরের খেদাপাড়া, ঝাঁপা, ও কাশিমনগর ইউনিয়ন, অভয়নগরের প্রেমবাগ, শ্রীধরপুর, শুভরাঢ়া ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড।
ঝিকরগাছার গদখালী ও বাঁকড়া ইউনিয়ন, চৌগাছার স্বরূপদাহ, বাঘারপাড়ার বাসুয়াড়ী এবং কেশবপুর সদর ইউনিয়ন।

এর আগে সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

সোমবারের সভায় সভাপতিত্ব করেন ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। সভায় যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভাশেষে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে। সেকারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় জোনভিত্তিক সংযমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কৈৗশল ও গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। গাইডলাইন অনুযায়ী সংক্রমণ প্রতিরোধে যশোর জেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভা (ওয়ার্ডভিত্তিক) রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনে বিভাজন করা হলো। রেড জোনকে সম্পূর্ণ ও ইয়োলো জোনকে আংশিক লকডাউনসহ জোনভিত্তিক পালনীয় সাধারণ নিয়মাবলী সন্নিবেশিত করা হলো।’

১৬ জুন মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এআদেশ বলবৎ থাকবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

রেড জোন বা উচ্চ ঝূকিপূর্ণ এলাকার জন্য ১১টি নির্দেশনা রয়েছে৷ এগুলো হলো:
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত শিফটে কৃষিকাজ করা যাবে।
২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা যাবে। তবে শহরাঞ্চলে সব বন্ধ থাকবে।
৩. বাসা থেকেই অফিসের কাজ করা যাবে।
৪. কোনো ধরনের জনসমাবেশ করা যাবে না। কেবল অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবেন।
৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে। রিকশা, ভ্যান, থ্রিহুইলার, ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করবে না।
৬. সড়ক, নদী, রেলপথে জোনের ভেতরে কোনো যান চলাচল করবে না।
৭. জোনের ভেতরে ও বাইরে মালবাহী যান কেবল রাতে চলাচল করতে পারবে।
৮. এই জোনের অন্তর্গত কেবল মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানে কেবল হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। বাজারে শুধু প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিং মল, সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৯. আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান/উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে।
১০. এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। শনাক্ত রোগীরা আইসোলেশনে (বাড়িতে/আইসোলেশন সেন্টারে) থাকবেন।
১১. মসজিদ/উপাসনালয়ে শুধু প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত ব্যক্তিবর্গ (কর্মচারী) অংশগ্রহণ করবেন।

হলুদ জোনভুক্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের ১১ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এগুলো হলো-
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষিকাজ করা যাবে।
২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করবেন। জনাকীর্ণ কারখানায় ৩৩ শতাংশ কর্মী বর্ধিত শিফটে কাজ করতে পারবেন।
৩. স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করবেন। বাকিরা বাসা থেকেই কাজ করবেন।
৪. ৩০ জনের বেশি জনসমাবেশ করা যাবে না।
৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে। রিকশা, ভ্যান, থ্রিহুইলার, ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়িতে একজন করে চলাচল করতে পারবেন।
৬. সড়ক, নদী, রেলপথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা যাবে।
৭. জোনের ভেতরে ও বাইরে মালবাহী যান চলাচল করতে পারবে।
৮. এই জোনের অন্তর্গত মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানে কেবল হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। বাজারে শুধু নিত্যপ্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিং মল, সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৯. আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান/উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করা যাবে।
১০. এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। শনাক্ত রোগীরা আইসোলেশনে (বাড়িতে/আইসোলেশন সেন্টারে) থাকবেন। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত আইসোলেশনের ব্যবস্থা থাকবে;
১১. মসজিদ/উপাসনালয়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ইবাদত করা যাবে।