মিয়ানমারে ভূমিধসে ১১৩ খনি শ্রমিকের মৃত্যু

মিয়ানমারে জেড খনিতে ভূমিধসে কমপক্ষে ১১৩ শ্রমিক মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যের হপাকান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তখন সেখানে ভারি বর্ষণ হচ্ছিল। এর পরে ভূমিধস সৃষ্টি হয়ে জেড খনি একটি হ্রদের আকার ধারণ করে। এর মধ্যে পড়ে মারা যান ওইসব মানুষ।

মিয়ানমারের ফায়ার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানিয়েছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, মূল্যবান জেড পাথর সংগ্রহকারী শ্রমিকরা পানির সঙ্গে মাটি গোলানো স্রোতে ভেসে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে তাতে উদ্ধার অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে লোকজনকে। আবার উদ্ধারকারী দলকে ভূমিধসে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে পাড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় কর্মকর্তা তার লিন মুয়াং বলেছেন, আমরা শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। অন্য মৃতদেহগুলো কাদামাটির ভিতর আটকে রয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।

উল্লেখ্য, হপাকান্ত এলাকায় খনিগুলো পরিচালিত হয় দুর্বল নিয়মকানুনের মাধ্যমে। আর ওই এলাকায় ভয়াবহ ভূমিধসও খুব সাধারণ বিষয়। এ খনিতে যেসব শ্রমিক কাজ করেন তারা সমাজের বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব খনিতে সবুজ বহুমূল্যবান জেমস্টোন হন্যে হয়ে খোঁজেন।
ওই এলাকার ৩৮ বছর খনিশ্রমিক মুয়াং খাইং বৃহস্পতিবারের এই দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি ভূমিধসের আগে ধ্বংসস্তূপের একটি চূড়া দেখতে পান। এ সময় তিনি এর একটি ছবি নিতে চেষ্টা করেন। তখনই লোকজন দৌড়াও দৌড়াও বলে চিৎকার করতে থাকে।

মুয়াং বলেন, চোখের নিমেষে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা লোকগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল। আমার হৃদয় শুকিয়ে গেল। আমি এক ভৌতিক জগতে তখন। লোকজন কাদার ভিতর আটকা পড়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল। কিন্তু তাদেরকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।

অং সান সুচির সরকার যখন ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসে তখন এই শিল্পকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু অধিকারকর্মীরা বলছেন, পরিবর্তন হয়েছে সামান্যই। উল্লেখ্য, এই জেড পাথর বিক্রি করে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৭৫ কোটি ৪ হাজার ডলার আয় করেছে মিয়ানমার। সরকারের এক্সট্রাকটিভ ইন্ডাস্ট্রিজ ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ-এর তথ্যে এ কথা বলা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই শিল্পের অর্থমূল্য আরো অনেক বেশি। এ পাথরের বেশির ভাগই রপ্তানি হয় চীনে। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এর মধ্যে জেড পাথর, কাঠ, স্বর্ণ এবং রাবার উল্লেখযোগ্য। দশকের পর দশক এসব সম্পদ আর্থিকখাতে ভূমিকা রেখে চলেছে।