মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমছে

lifestyle

বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে কমছে জনসংখ্যা। চলতি দশকের শেষে জাতিসংঘের পূর্বাভাসের চেয়ে ২০০ কোটির কম জনসংখ্যা হবে বলে জানিয়েছে এক গবেষণা।

মঙ্গলবার মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, শিশু জন্মের পরিমাণ কমে গেলে তা ভবিষ্যৎ সমাজের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

প্রজনন হার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে ২১০০ সালের পর বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যাই এখনকার তুলনায় অনেক কম থাকবে। কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে এ সময়ের মধ্যে স্পেন ও জাপানসহ ২৩টি দেশের জনসংখ্যা এখনকার অর্ধেক হয়ে যাবে বলেও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন।

১৯৫০ সালেও একজন নারী জীবদ্দশায় গড়ে ৪ দশমিক ৭টি সন্তানের মুখ দেখতেন, যা ২০১৭ সালে ২ দশমিক ৪-এ নেমে এসেছে বলে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

প্রজনন হার আরও কমে ২১০০ সাল নাগাদ ১ দশমিক ৭ এ দাঁড়াতে পারে বলে ল্যানসেটে প্রকাশিত নিবন্ধে ধারণা দিয়েছেন গবেষকরা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে ২০৬৪ সাল নাগাদ মানুষের সংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছালেও তার ৩৬ বছর পরই এ সংখ্যা ৮৮০ কোটিতে নেমে যাবে।

অথচ জাতিসংঘ এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৭০ কোটিতে উন্নীত হবে। এবং ২১০০ সালের দিকে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১১০০ কোটিতে।

বিজ্ঞানীরা এ প্রজনন হার কমার পেছনে চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের আগের ?তুলনায় বেশি পদচারণা এবং জন্মনিরোধক পণ্যের আধিক্যকে কারণ হিসেবে দেখছেন। গবেষকদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, জাপানের জনসংখ্যা এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে মাত্র ৫ কোটি ৩০ লাখে।

যেখানে ২০১৭ সালেও দেশটির জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ইউরোপের দেশ ইতালিতে ২০১৭ সালে ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ লোক।

২১০০ সাল নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রজনন হার কমায় চীনের জনসংখ্যাও আগামী ৮ দশকে অনেক কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, আর ৪ বছরের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে হবে ১৪০ কোটি। এরপর তা কমতে কমতে ২১০০ সাল নাগাদ থাকবে মাত্র ৭৩ কোটি ২০ লাখ। গবেষকদের অনুমান, যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ২০৬৩ সালে হবে সবচেয়ে বেশি- ৭ কোটি ৫০ লাখ।

২১০০ সালে সেটি কমে হবে ৭ কোটি ১০ লাখ। বিশ্বের ১৯৫টি দেশের ১৮৩টিতেই প্রজনন হার এমন হবে যে তা আর প্রতিস্থাপন যোগ্য থাকবে না। ফলে এ বিষয়টি বিশ্বের দেশগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

জনসংখ্যা কমলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমবে, কমবে বন ধ্বংস করে কৃষিজমি বানানোর তৎপরতা। ফলে প্রজনন হার কমাকে অনেকে ভালো বললেও বিজ্ঞানীরা খুশি হতে পারছেন না।

কেননা, তাদের হিসাবে ২১০০ সাল নাগাদ তরুণদের তুলনায় বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা এখনকার অনুপাতে অনেক বেশি থাকবে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল ৬৮ কোটি ১০ লাখ।

২১০০ সালে এ সংখ্যা হবে মাত্র ৪০ কোটি ১০ লাখ। অন্যদিকে ২০১৭ সালে ৮০ বছরের বেশি বয়সীর সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ১০ লাখ, ২১০০ সালে তা বেড়ে হবে ৮৬ কোটি ৬০ লাখ। অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুরে বলেন, ‘এটি সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

বৃদ্ধদের এ পৃথিবীতে কারা কর দেবে? বেশি বয়সীদের স্বাস্থ্যসেবায় কারা অর্থ খরচ করবে? কারা তাদের দেখভাল করবে? সে সময় চাকরি থেকে অবসর নেয়ার সুযোগ থাকবে তো?’

প্রজননে উৎসাহিত করতে অনেক দেশ সবেতন পিতৃত্বকালীন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি, বিনামূল্যে শিশুসেবা, নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা ও চাকরিকালীন সুযোগ দিলেও এগুলোতে যে সমাধান মিলবে, তাও বলা যাচ্ছে না।