ফেসবুক চালান বিকল্প পথে, নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন থাকুন

facebook

বিশ্বে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের আছে কোটি কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী। তবে এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য অনেক ব্যবহারকারীর কাছেই অপছন্দের। এসব অপছন্দ এড়িয়ে কী কী উপায়ে ফেসবুক ব্যবহার করা যেতে পারে তারই খোঁজখবর..
অ্যানড্রয়েড ফোনের সবচেয়ে বড় ‘ব্যাটারি খাদক’ অ্যাপ হচ্ছে ফেসবুক। শুধু ব্যাটারিই নয়, ফোনের র‌্যাম ও প্রসেসিং ক্ষমতার বড় একটা ভাগই ফেসবুকের একাই খেয়ে বসে থাকার নজির আছে। যাদের ফোনে ৪ বা তারও বেশি র‌্যাম আর বেশ শক্তিশালী প্রসেসর আছে, তারা এ সমস্যার সম্মুখীন তেমন না হলেও দুই গিগাবাইট র‌্যামের ফোনে ফেসবুকের চাপ পুরোপুরি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মূল অ্যাপ ব্যবহার না করে ফেসবুক চালানোই শ্রেয়।

ক্রোম বা ফায়ারফক্স

ফেসবুক যে একটি ওয়েবসাইট, অনেক সময়ই আমরা সেটি মনে রাখি না। ফোনে বাড়তি অ্যাপের চাপ না ফেলে সহজেই যেকোনো ব্রাউজারে ফেসবুক চালিয়ে প্রায় সব মূল ফিচার ব্যবহার করা সম্ভব। ব্রাউজারে ফেসবুক ব্যবহারের দুটি সাইট রয়েছে, https://m.facebook.com এবং https://mbasic.facebook.com| এ ছাড়া আলাদা ডাটা প্যাক না কিনে বাড়তি খরচ ছাড়া ফেসবুক ব্যবহারের জন্য আছে https://0.facebook.com। তবে তাতে ছবি বা ভিডিও দেখার উপায় নেই। অ্যাপের মতো ইন্টারফেস, উচ্চমানের ছবি ও ভিডিও ব্যবহারের জন্য m.facebook.com আদর্শ, তবে অল্প ডাটা ও র‌্যাম ব্যবহারের জন্য mbasic.facebook.com-এর জুড়ি নেই। তবে ব্রাউজারে ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সমস্যা, লাইভ ভিডিও দেখানোর উপায় নেই। নেই লোকেশন ব্যবহার করে বন্ধুদের খুঁজে নেওয়ার উপায় বা কন্ট্যাক্টস সিংক করার সিস্টেম। এর বাইরে বাকি সব ফিচার, এমনকি নোটিফিকেশনও ব্রাউজার থেকেই পাওয়া যাবে।

ফেসবুক লাইট

ফোনের ওপর চাপ কমাতে ফেসবুকের নিজস্ব হালকা অ্যাপ ফেসবুক লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। লাইট অ্যাপের ইন্টারফেস ও ফিচার অনেকটা mbasic সাইটের মতো, লাইভ করা বা লোকেশন ব্যবহারের সুবিধা এটিতেও নেই। ছোট ছোট লেখার ওপর টাচ করে কাজ করতে হয়। ছবি ও ভিডিওর মানও খুবই কম। এর পরও ফেসবুক লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে পুরনো মডেলের বা কম শক্তির ফোনগুলোর ওপর চাপ কমাতে। সঙ্গে যদি মেসেঞ্জার লাইট ব্যবহার করা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। মাত্র ১ গিগাবাইট র‌্যামের ফোনেও এই দুটি অ্যাপ ফেসবুকের বেশির ভাগ ফিচার ব্যবহারের উপায় করে দেবে। বোনাস হিসেবে ডাটাও কম ব্যবহৃত হয় এ অ্যাপগুলোতে। সমস্যা একটিই—মূল ফেসবুক অ্যাপের মতো গোছানো বা ফিচারে ভরপুর নয় লাইট সংস্করণ।

ফাস্টার ফর ফেসবুক লাইট

ফেসবুকের mbasic ওয়েবসাইটের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই অ্যাপ। মেসেঞ্জার ও ফেসবুক, দুটি অ্যাপের কাজ সে একাই করতে সক্ষম। অ্যাপে দেওয়া হয়েছে ডার্কমোড, আছে মেসেঞ্জারের চ্যাটহেড। ডাটাও খুব কম ব্যবহার করে এ অ্যাপ। যাঁদের ফোনে ফেসবুক লাইট ব্যবহার করতেই হবে তাঁরা ‘ফাস্টার ফর ফেসবুক লাইট’ ব্যবহার করে অভিজ্ঞতা কিছুটা উন্নত করতে পারবেন। অ্যাপটি গুগলের ছাড়পত্র পাওয়া এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাড়তি পাওয়া, ভিডিও এবং GIF দেখার সুবিধা।

ফ্রেন্ডলি ফর ফেসবুক

অনেকেই চান তাঁর ফেসবুক অ্যাপ কাস্টমাইজ করতে। বিভিন্ন থিম, বাটন ও ইন্টারফেসে নতুনত্ব, ফন্ট বদলে ফেলা থেকে শুরু করে নানা রকম পরিবর্তন। এগুলো সহজেই করা যাবে ‘ফ্রেন্ডলি ফর ফেসবুক’ অ্যাপ ব্যবহার করে। এতে ফেসবুক অ্যাপ ও মেসেঞ্জার দুটির ফিচারই পাওয়া যাবে। এতে আছে থিম পরিবর্তনের ফিচার, চাইলে ফন্ট বদলে ফেলাও যাবে। তবে এটির সবচেয়ে বড় ফিচার, নিউজফিড ফিল্টার করার সুবিধা। কোনো বিষয় বা প্রসঙ্গের পোস্ট দেখতে না চাইলে সেটির মূল শব্দ বা কি-ওয়ার্ড ব্ল্যাকলিস্ট করে দিলে ফিডে সে সম্পর্কিত কোনো পোস্টই আর দেখা যাবে না। ইদানীং বিশেষ করে ভয়ংকর সব বিষয়বস্তু ভাইরাল হওয়ার যুগে ব্ল্যাকলিস্টের প্রয়োজনীয়তা অনেক। মূল অ্যাপটি ফ্রি, তবে কিছু ফিচারের জন্য ইন-অ্যাপ পারচেজ করতে হবে।

সোয়াইপ ফর ফেসবুক

কখনো কি চেয়েছেন আপনার ফেসবুক অ্যাপ গুগল প্লাস বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো ইন্টারফেস ব্যবহার করুক? সে কাজের জন্য ‘সোয়াইপ ফর ফেসবুক’ ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যাপটিতে আরো আছে থিম ব্যবহারের সুবিধা, আছে মেসেঞ্জার সুবিধাও। চ্যাটহেড, ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন এবং ৩০টিরও বেশি ভাষা ব্যবহারের সুবিধা দিচ্ছে অ্যাপটি। মূল ফেসবুক অ্যাপের বেশির ভাগ সুবিধা এতে পাওয়া যাবে, কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে বেশ কিছু বাড়তি ফিচারও, যেমন মাল্টিপল লে-আউট। অ্যাপটি ডাউনলোড ও ব্যবহার করা যাবে বিনা মূল্যে। তবে সব ফিচারের জন্য লাগবে ইন-অ্যাপ পারচেজ। সোয়াইপের ইন্টারফেস প্রায় সব অ্যাপের চেয়ে ভালো।

টিনফয়েল ফর ফেসবুক

ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে ফোনের অনেক তথ্য সার্ভারে আপলোড করে থাকে ফেসবুক অ্যাপ। সার্চের তথ্য, ব্রাউজারের তথ্য, এমনকি ফোনে কী অ্যাপ কখন ব্যবহার করা হচ্ছে এমন তথ্যও ফেসবুক ব্যবহার করছে বলে বারবার গুঞ্জন উঠেছে। এর সত্য-মিথ্যা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই; কিন্তু যাঁরা তর্কে সমাধান না খুঁজে শুধু সাবধান হতে চান তাঁদের জন্য অ্যাপ ‘টিনফয়েল ফর ফেসবুক’। এতে নেই কোনো বিজ্ঞাপন, নেই কোনো পারমিশন। আপনার ফোনের কোনো তথ্যই ফেসবুক টিনফয়েলের মাধ্যমে নিতে পারবে না। এটিও মোবাইল ফেসবুক সাইট ব্যবহার করেই কাজ করে। তাই ফিচারও ঠিক অতটুকুই। যা নেই তা হচ্ছে কোনো প্রকারের আপলোড করার সুবিধা, লাইভ এবং চ্যাট করার সুবিধা। গোপনীয়তা বাঁচাতে হলে এগুলো বাদ দিতেই হবে আর কোনো উপায় নেই।

সুইফট ফর ফেসবুক লাইট

ডাউনলোড সাইজে অ্যাপটি মাত্র ৩০ মেগাবাইট। আর র‌্যাম ব্যবহার করে মাত্র ২০ মেগাবাইট। এর চেয়ে একচুলও বেশি নয়। অ্যাপটিতে আছে মূল ফেসবুক লাইট অ্যাপের সব ফিচার, সঙ্গে বাড়তি হচ্ছে মেসেঞ্জার ফিচার। একদম যেন ‘অ্যানড্রয়েড গো’ ডিভাইসের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এটি। ফটো বা ভিডিও আপলোড করা, ট্যাগিংয়ের মতো লাইট অ্যাপের তুলনায় কিছুটা অ্যাডভান্স ফিচারও এতে আছে। ব্যবহার করার সময় ব্যাটারির ওপর চাপও নেই। সমস্যা একটিই, অ্যাপে দেখতে হবে বিজ্ঞাপন। সেটির দাওয়াইও দেওয়া আছে, মাত্র ৯৯ সেন্টের একটি ইন-অ্যাপ পারচেজ। এরপর আর কখনো দেখতে হবে না বিজ্ঞাপন। ফোনের জায়গা আর র‌্যাম দুটিই বাঁচাতে আদর্শ এই অ্যাপ। ইন-অ্যাপ পারচেজটিই বলা যায় অ্যাপের সবচেয়ে বড় অসুবিধা।

ঢাবি থেকে বরখাস্ত হতে পারেন ‘নকল মাস্কে’ গ্রেপ্তার শারমিন

স্লিমসোশ্যাল

মাত্র ১০০ কিলোবাইট সাইজের অ্যাপ ‘স্লিমসোশ্যাল’। কাজও করে চমৎকার, যদি খুব বেশি ফিচারের প্রয়োজন না হয়। অ্যাপটি ফেসবুকের m.facebook.com সাইটের ওপর কিছুটা কাস্টমাইজ করে ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরে। সে অর্থে মনে হতে পারে, অ্যাপটি ইনস্টল করার প্রয়োজনই বা কী? স্লিমসোশ্যালের সবচেয়ে বড় সুবিধা—এটি ফেসবুকের সব বিজ্ঞাপন ফিল্টার করে। ফলে নিউজফিড থাকে পরিষ্কার, ব্যবহৃত হয় অনেক কম ডাটা। ভবিষ্যতে অ্যাপটি আরো দ্রুতগামী এবং ফিচারে ভরপুর করার প্রতিজ্ঞা করেছেন এটির নির্মাতা। তবে বর্তমানে অ্যাপটি কিছুটা অপরিশীলিত। সামনের দিনগুলোতে হালনাগাদের মাধ্যমে সেসবও ঠিক করে দেওয়া হবে। আর এটি ব্যবহার করা যাবে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে।