এই ঈদেও মুসল্লিশূন্য থাকছে শোলাকিয়া!

গত ঈদুল ফিতরের পর এবারও ঈদুল আজহায় মুসল্লিশূন্য থাকছে দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়া। বৈশ্বিক মহামারি করোনা বদলে দিয়েছে শত বছরের ইতিহাস। করোনা বিস্তার রোধে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশন।

সেই প্রেক্ষিতে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ১৯৩তম ঈদুল আজহার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

১৯১ বছর আগে শুরু হয়েছিল ঈদের বড় জামাত। এরও দু্ইশ বছর আগে থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর নানা প্রতিকূল সময় কেটেছে। কিন্তু ঈদের জামাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এবার ২য়বারের মতো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান খালি থাকছে ঈদের দিনেও। থাকছে না সেই চিরচেনা কোলাহল। লাখো মানুষের মুখরতা।

প্রতিবছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশের তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি এক সাথে শোলাকিয়ার বিশাল প্রান্তরে নামাজ পড়েন। এখানে একটি মাত্র জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল প্রান্তরে মুসল্লিরা যাতে নামাজ শুরুর মুহূর্তটি জানতে পারেন এজন্য নামাজ শুরুর আগে বেশ কয়েকবার বন্দুকের গুলি ছুঁড়া হয়। সব শেষ জামাত শুরুর এক মিনিট আগে গুলি ছুঁড়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি ঘোষণা করা হয়।

লাখো মুসল্লির নিরাপত্তায় নেয়া হয়ে থাকে চার স্তরের নিরাপত্তা। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকে মাঠের চারপাশে। জামাতকে ঘিরে পুরো শহর যানবাহনশূন্য করে সাজানো হয় ট্রাফিক ব্যবস্থা। আকাশে নজরদারি করে উন্নত ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন। দূরের মুসল্লিদের জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার থেকে চলাচল করে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। তবে এবার সব আয়োজন থামিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য করোনা।

জানা গেছে, বারো ভুইয়াদের অন্যতম প্রতাপশালী বীর ঈশা খাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ্ করেন। তারও দু’শ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে উল্লেখ আছে ওই ওয়াকফ দলিলে।

১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি এক সাখে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।

শোলাকিয়া ঈদগাহে বড় জামাতে লাখো মুসল্লির সাথে ঈদের নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর ঈদের সময় এখানে ঢল নামে দেশ-বিদেশের লাখো মুসুল্লির। অনেকে বংশ পরম্পরায় ঈদের নামাজ পড়ে আসছেন প্রায় ৬ একর আয়তনের এ ঈদগাহে।

২০১৬ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন বেশ কয়েকজন। তবু থেমে থাকেনি ঈদের জামাত। তবে এই দ্বিতীয়বারের মতো ঈদের দিনেও নিরব থাকছে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া।