‘দুবৃত্তের আগুনে কেড়ে নিল বক্কারের বাড়িঘরসহ সর্বস্ব’

শীল-নুড়াই হলো বক্কারের কাল। সাজানো সংসার এখন শুধুই পোড়া ছাই। (২৬ অক্টোবর) সোমবার রাতে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে তার সব পুড়ে হয়েছে ছাই। ফিরে পাবে কি মাথা গোজার ঠাঁই, পাবে কি ন্যায় বিচার? এমন দোলাচলে ভাসছে বক্কার ও তার পরিবার।

যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের নীমতলী গ্রামের আখের আলী মোল্লার ছেলে আবু বক্কার। পেশায় তরকারি বিক্রেতা। দিন এনে দিন চলে বক্কারের। অনেক কষ্টে টিন দিয়ে করেছিলো বাড়ি। টিনের বাড়ি হলেও ধার, দেনা করে তীলে তীলে সাজিয়েছিলো একটি ছোট্ট সংসার। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখেই কাটছিলো দিন। কিন্তু দুবৃর্ত্তের দেওয়া আগুনে পুড়েতো এখন সব শেষ হয়ে গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে বক্কার।

বাক্কারের অভিযোগের তীর তার প্রতিবেশি মশিয়ারের দিকে। কেননা দুদিন আগেই দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি ও তার স্ত্রী নাজমা। বাক্কার বলেন, ৯ মাস হলো তারা এই মাঠের ভেতরে বাড়ি করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতেই বসবাস করছিলেন। মশিয়ারের সাথেও ছিলো ভালো সম্পর্ক। তাদের বাড়ি থেকেই সাইড লাইন নিয়ে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ চলছিল। কিন্তু বিল ভাগাভাগি নিয়ে সম্পর্কের অবনতির সুত্রপাত। সেই থেকেই তার পরিবারের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করতে থাকে মশিয়ার ও তার স্ত্রী। রাতে ঘরের চালে ঢিল ছোড়া, বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিস চুরি হওয়ার মতও ঘটনা ঘটতে থাকে। সর্বশেষ তিন মাস আগে চুরি হয় রান্না ঘরের শীল-নুড়া। দুদিন আগেই সেটি পাওয়া যায় মশিয়ারের বাড়ি থেকে। আর এটিই হলো তার কাল। বলেছিল দেখে নেবে তাদের। কিন্তু এভাবে দেখে নেবে সেটা ভাবতে পারেনি কেউই।

বক্কারের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। হাড়ি-পাতিল, সংসারের আসবাবপত্রসহ যাবতীয় জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা এখন কি খাবো কোথায় থাকবো। আমরা গরীব মানুষ বলে কি ন্যায় বিচার পাবো না? আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম সেই সুযোগে আমার সব পুড়িয়ে দিল? আমাদের এমন সর্বনাশ কিভাবে করলো এসব বলতে বলতে মুর্ছা যাচ্ছে বারবার।

এদিকে রাত থেকেই এলাকার মানুষ ছুটছে পোড়া ঘর দেখতে। তাদের এমন অবস্থা দেখে আফসোস করছে প্রতিবেশিরা। সকলের দাবি এই ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।

প্রতিবেশি হাবিবুর রহমান বলেন, এশার নামাজ পড়ে আসার সময় চারিদিকে চেচামেচি শুনে ছুটে এসে দেখেন দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চেষ্টার পর আগুন নিভাতে সক্ষম হন তারা। কেউ বলছে আগুন লাগানো হয়েছে আবার কেউ বলছে বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে হয়েছে। তবে বিদ্যুত অফিসের লোক এসে দেখে বলেন এটি সর্ট সার্কিট থেকে হয়নি। কেউ হয়ত আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।

প্রতিবেশি ইউনুচ গাজী বলেন, তার বয়স এখন ৬৫ বছর চলছে। তার বয়সে এই রকম পোড়া তিনি আগে কখনও দেখেননি।

পোড়া ঘর দেখতে আসা রেজাউল বলেন, তিনি সকালে বাজারে এসে ঘটনাটি লোক মুখে শুনেছেন। এখন সেটা দেখতে এসেছেন। বাজারে কেউ বলছে পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অনেকে বলছে পেট্রোল ছিটানো হয়েছে, কেউ বলছে ডিজেল ছিটানোর পর আগুন ধরানো হয়েছে। তবে যেভাবেই ধরানো হোক না কেন এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এই ঘটনার তদন্ত পূবর্ক সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তিনি।

তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিযুক্ত মশিয়ার রহমান বলেন, এসব মিথ্যা কথা। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। হতে পারে তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক নেই, তাই বলে এমন নিঃশ্ব করা কর্মকান্ড আমরা করেনি।

এ বিষয়ে কচুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।