ঝিনাইদহের কামান্নার ২৭ শহীদ স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হচ্ছে

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের কামান্না গ্রামে ঐতিহাসিক ২৬ নভেম্বর কামান্না দিবস সীমিত পরিসরে পালন হবে। বিশ্বগ্রাসী করোনা ভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে শৈলকুপা উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়া ইউনিয়ন কমান্ড দিবসটি যৌথভাবে পালন করে। এ উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সম্মাননা দেয়া হবে।

বাড়ির বর্তমান মালিক কামান্নার কাজী পরিবার একাত্তরে যে বাড়িতে ২৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, সেই বড়ি ও জমি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণে দান করবেন বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঝিনাইদহ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মকবুল হোসেন, মাগুরা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রহমান, শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিলুফা ইয়াসমিন, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পার্থপ্রতীম শীল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শৈলকুপা উপজেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার রহমত আলী মন্টু ও বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

প্রতিবছর ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা, তাদের উত্তরসুরী এবং শহীদ ২৭ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যসহ হাজারো মানুষ আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে চোখের পানি ফেলে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জানান ২৭ প্রিয়জনদের প্রতি যারা ৪৯ বছর আগে জীবন দিয়েছেন দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য। শহীদ পরিবারের সদস্য এবং কামান্না ও মাগুরার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এখনও বেশ ক্ষোভ রয়েছে বলে তারা জানালেন। তাদের মতে, দেশ স্বাধীন হবার পর তৎকালীন বেশ কজন মন্ত্রী এমপি, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বহু নেতা এবং উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এলাকার রাস্তাঘাট ও বাজার উন্নয়ন, কামান্নায় একটি পর্যটন কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও তাদের প্রতিশ্রুতির কোন প্রতিফলন ঘটেনি। স্থানীয়ভাবে দোয়া, মিলাদ মাহফিল আর আলোচনার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকে।

তবে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, যে ঘরটিতে ২৭ বীরসেনানী শহীদ হন সেই ঘরের মালিক কামান্নার কাজী পরিবার ওই ঘর ও কিছু জমি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের জন্য দান করতে যাচ্ছেন যা হবে ঝিনাইদহবাসি, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বেশ গর্বের।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ২৬ নভেম্বর ভোররাতে শৈলকুপা উপজেলা শহর (তৎকালিন থানা) থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে বগুড়া ইউনিয়নের কামান্না গ্রামে কুমার নদের উত্তরপাড়ে যুদ্ধকালীন সময়ে মাধব ভৌমিকের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাটি অবরোধ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা। এলাকার কিছু মুক্তিযোদ্ধার মতে, ওই গ্রামের এক ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানী বাহিনীর চর হিসাবে কাজ করছিলেন, তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ২৭ মুক্তিপাগল যুবক মোমিন, কাদের, শহিদুল, সলেমান, রাজ্জাক, ওয়াহেদ, রিয়াদ, আলমগীর, মতালেব, আলী হোসেন, শরিফুল, আনিচুর, আলিমুজ্জামান, তাজুল, মনিরুজ্জামান, নাসিম, রাজ্জাক-২, কওছার, মালেক, আজিজ, আকবর, সেলিম, হোসেন, রাশেদ, গোলজার, অধীর আর গৌরকে গুলি করে আর রেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

ওইসময় প্রতিবেশি গৃহবধূ নেছা বিবি ও ফণিভূষন কুন্ডু পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হন। শহীদদের অধিকাংশের বাড়ি মাগুরা জেলার হাজিপুরে।

হানাদাররা এলাকা ত্যাগ করার পর জীবনে বেঁচে যাওয়া কয়েকজনসহ এলাকাবাসী কামান্না হাইস্কুলের খেলার মাঠের উত্তরপাশে কুমার নদীর ধারে ৬টি গণকবরে মোট ২৭ বীর সন্তানকে দাফন করেন।