৪২ বসন্তে চিত্রনায়িকা শাবনূর

নব্বইয়ের দশক থেকে এ পর্যন্ত আসা অভিনেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হিসেবে এখনও বিবেচনা করা হয় চিত্রনায়িকা শাবনূরকে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন, তা আজীবনই মনে রাখবে এ দেশের সিনেপ্রেমীরা। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে শাবনূর যেভাবে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন, তাতে তাকে আদর্শ হিসেবে মানেন এই প্রজন্মের অনেক নায়িকা।

বাংলা চলচ্চিত্রের বহু প্রতিভাধর সেই চিত্রনায়িকার আজ জন্মদিন। জীবনের ৪১টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৪২ বছরে পা দিলেন শাবনূর। ১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর খ্যাতিমান এই নায়িকার জন্ম হয়েছিল যশোরের শার্শা উপজেলায়। তার বাবার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাবনূর সবচেয়ে বড়। তার ছোট বোনের নাম ঝুমুর, ভাই তমাল। শাবনূরের মতো তারাও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।

বিদেশে বসবাসরত শাবনূর তার ৪২তম জন্মদিনে কেমন কোনো আয়োজন রাখেননি। তবে বসে নেই তার ভক্তরা। তাইতো সুদূর ওমানে পালিত হয়েছে প্রিয় তারকা শাবনূরের জন্মদিন। সেখানে বসবাসরত আহমেদ রিয়াদ শ্রাবণ নামে এক বাংলাদেশি ভক্ত কেক কেটে উদযাপন করেছেন শাবনূরের জন্মদিন। ওমান থেকে মুঠোফোনে রিয়াদ জানান, তার উদ্যোগে ওমানে শাবনূরের সকল ভক্তদের নিয়ে তারা প্রিয় অভিনেত্রীর জন্মদিন পালন করেছেন।

কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর যেভাবে শাবনূর হলেন

চলচ্চিত্র জগতের অনেক তারকাই আসল নামের পরিবর্তে ভিন্ন নামে বিনোদন জগতে পরিচিত হন। মান্না, জসিম, সোহেল রানা, রুবেল এবং এ প্রজন্মের শাকিব খান থেকে শুরু করে এ তালিকায় আছে আরও অনেক নাম। চিত্রনায়িকা শাবনূর সে দলেরই একজন। তার আসল নাম শুনলে বেশিরভাগ মানুষই তাকে চিনবেন না। অথচ শাবনূর নামে তিনি সারা দেশব্যাপী সুপরিচিত।

পারিবারিক ভাবে শাবনূরের নাম রাখা হয় কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর। পরে স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক এবং তার মেনটর এহতেশাম কাজী শারমিন নাহিদ নুপুরকে বানিয়ে দেন শাবনূর। শাবনূর শব্দের অর্থ হচ্ছে রাতের আলো।

বাংলা চলচ্চিত্রে শাবনূরের অবদান

১৯৯৩ সালে ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে পরিচালক এহতেশামের হাত ধরে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাবনূর। প্রথম ছবি ব্যর্থ হলেও প্রয়াত সুপারস্টার নায়ক সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দেন বেশ কয়েকটি সুপারহিট ও ব্যবসাসফল ছবি। সালমান-শাবনূর জুটিকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে এখনও বিবেচনা করা হয়।

সালমান শাহের মৃত্যুর পর নায়ক রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস ও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন বহু ছবিতে। সেখানেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ একবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, রেকর্ড ১০ বার ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ এবং সাত বার ‘বাচসাস পুরস্কার’সহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন শাবনূর।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন

২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয়। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন শাবনূর। বিয়ের পর ভাই ও বোনদের মতো শাবনূরও স্বামী অনিকের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করেন।

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর শাবনূর-অনিক জুটির ঘর আলো করে আসে তাদের প্রথম সন্তান পুত্র আইজান নিহান। বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে স্থায়ী ভাবে অস্ট্রেলিয়াতেই বসবাস করছেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের সুপারহিট এই নায়িকা। জরুরি কাজ পড়লে মাঝে মাঝে ছুটে আসেন দেশের মাটিতে।