হোয়াইট হাউসেও নিঃসঙ্গ ট্রাম্প

trump

‘সর্বোপরি, কেউ আপনার কথা চিন্তা করে না। প্রত্যেকেই বিধ্বস্ত, সত্যি বলতে সবাই এই শেষ সময়টুকু চলে যাওয়ার অপেক্ষা করছে’- কথাগুলো বলছিলেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা। তার এই কথাতেই বোঝা যায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর আসনে বসেও কতটা নি:সঙ্গ সময় কাটছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

গত চার বছরে নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ট্রাম্প। তবে ক্ষমতার একেবারে শেষ সময়ে এসে এমন অভাবনীয় দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে এটা হয়তো কল্পনাও করেননি তিনি। নিজ দল, পার্লামেন্টে আগেই একা হয়ে পড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, এবার সামনে এলো যে হোয়াইট হাউসে তার যাওয়ার অপেক্ষা করছেন ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের স্টাফরা সময় গণনা করছেন যে কখন ট্রাম্পে সময় শেষ হবে। মার্কিন পার্লামেন্টে সমর্থকদের হামলায় ট্রাম্পের উস্কানির যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এই ঘটনার পর এতদিন প্রশাসনের যারা ট্রাম্পের অনুগত ছিলেন এবং সাবেক যারা ট্রাম্পকে সমর্থন করতেন তাদের সমর্থন হারিয়েছেন তিনি।

সোমবার ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব হাউসে তুলতে পারে ডেমোক্র্যাটরা। এই ঘটনার পর হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বিরক্ত ও বিব্রত। তারা মনে করছেন যে, ট্রাম্পের আচরণে তাদের সম্মানহানি হয়েছে এবং চাকরির ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

গত কয়েকদিনে হোয়াইট হাউসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। যারা এখন তাদের দায়িত্বে রয়েছেন তারা বলছেন, হোয়াইট হাউসে স্বচ্ছভাবে ক্ষমতা স্থানান্তর নিশ্চিত করতে তারা দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হোয়াইট হাউসের একজন প্রবীণ কর্মকর্তা ট্রাম্পের ওপর আক্ষেপ করে বলেন, ‘তিনি আমাদের হারিয়েছেন। তিনি তার নিজের প্রশাসন হারিয়েছেন। আমি যেমন বলেছিলাম, আমাদের মধ্যে অনেকে মনে করছে যে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।’

ট্রাম্প প্রশাসনের সমস্ত কর্মকর্তারা ২০ জানুয়ারি তার ক্ষমতা শেষ হওয়ার দিনগুলো গণনা করছেন। শুধু হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের সঙ্গেই নয় রানিং মেট ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গেও সম্পর্কের দারুণ অবনতি হয়েছে ট্রাম্পের।

ক্যাপিটলে তার সমর্থকদের তাণ্ডবের আঁচ ভালোভাবেই টের পাচ্ছেনট্রাম্প। আর নয় দিন পরেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যেতে হবে তাকে। দায়িত্ব নেবেন জো বাইডেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ট্রাম্পের উস্কানিতেই পুরো তাণ্ডব হয়েছে। তাই তার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার কোনো অধিকার নেই।

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি রবিবার বলেছেন, তারা প্রথমে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করতে চাইবেন, যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করা হবে, তিনি যাতে সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনে দেয়া ক্ষমতার প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেন। তাতে কাজ না হলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব নেয়া হবে।

আগেও একবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনা হয়েছিল। কিন্তু তা অনুমোদিত হয়নি। রিপাবলিকানদের সমর্থন না পেলে তা হওয়া কঠিন।

ইতিমধ্যে দুই জন রিপাবলিকান সেনেটার ক্যাপিটল নিয়ে ট্রাম্পের নিন্দা করেছেন। রিপাবলিকান সেনেটার প্যাট টুমে তো ট্রাম্পের পদত্যাগও দাবি করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক রিপাবলিকান গভর্নর আর্নল্ড শুয়ার্জনেগার ক্যাপিটলের ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার ১৯৩৮ সালে হাউস অফ ব্রোকেন গ্লাসের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। প্রাউড বয়েসদের সঙ্গে নাৎসীদের মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। তবে ট্রাম্পে ভাগ্যে কী রয়েছে সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।