বিভাগীয় পর্যায়ে ঝিনাইদহের শ্রেষ্ঠ জয়িতা রোকেয়া খাতুন

শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে ঝিনাইদহ জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন রোকেয়া খাতুন।

তিনি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা। ৩৮ বছরের শিক্ষকতার স্বীকৃতি পেলেন এ বছর তিনি। এ বছরের ঝিনাইদহ জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন রোকেয়া খাতুন।

গত মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) খুলনা বিভাগীয় মহিলা বিষায়ক অধিদপ্তরের অধীনে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। মহিলা বিষায়ক অধিদপ্তরের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগীয় প্রশাসন এ পুরস্কারের আয়োজন করে।

রোকেয়া খাতুন ১৯৪৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার মধুপুরে জন্ম গ্রহন করেন।তার বাবা মৃত শেখ আব্দুর রউফ, মাতা মৃত জামেনা খাতুন। ১৪ ভাই-বোনের সংসারে তিনি ছিলেন চতুর্থ সন্তান। তার বাবার পক্ষে তাদের লেখা পড়াসহ সংসার চালানো খুবই কষ্টকর ছিল। ১৯৬৩ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। এরপর খুলনাতে দাদার বাড়ি চলে আসেন এবং বিএল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পূর্বেই তার পরিবার বিয়ে দিয়ে দেন। তখন তার স্বামী নুরুল ইসলাম ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। শ্বশুর বাড়ির পরিবেশ অনুকূল থাকায় তিনি শ্বশুর বাড়ি থেকে লেখাপড়ার সুযোগ পান। ১৯৬৬ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে বিএ পাশ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি কালীগঞ্জ সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে বিএড করেন এবং চাকরিরত অবস্থায় ১৯৯১ সালে প্রাইভেটে এমএ পাশ করেন। ওই বছর তার ছেলেও রকিবুল ইসলাম মিল্টন এমএ পাশ করেন। মা-ছেলে এক সাথে এমএ পাশ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনকালে হাজার হাজার ছাত্রীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।

দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনে আলো জ্বেলে ২০০৭ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েও বসে নেই। তিনি ছোট ছোট শিশুদের শিক্ষায় নিয়জিত আছেন।
বর্তমানে তিনি জাপান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর আওতায় একটি স্কুল সুনিকেতন পাঠশালাতে প্রিন্সিপাল হিসাবে কর্মরত আছেন। একনিষ্ঠতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন সময়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে সম্মাননা পেয়েছেন।

রোকেয়া খাতুনের নামের সাথে এ দেশের নারী শিক্ষার অগ্রদৃত বেগম রোকেয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নারী শিক্ষা, বাল্য বিবাহ নিরোধ ও যৌতুক প্রথা বন্ধ করার জন্য অনেক সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রীদের অভিভাবকদের অনুপ্রণিত করেন।

তার একমাত্র ছেলে রকিবুল ইসলাম মিল্টন কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

একমাত্র মেয়ে শাহনাজ পারভিন কালীগঞ্জ সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।

রোকেয়া খাতুনের স্বামী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম কালীগঞ্জ কলেজ, ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ, যশোর সরকারি এম এম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন।