আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী

দাঁড়াও পথিক-বর…তিষ্ঠ ক্ষণকাল!
আজ ২৫ জানুয়ারী। বাংলা সাহিত্যের অমর কবি অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী।

কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ীতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রতি বছর সপ্তাহব্যাপী “মধুমেলা” অনুষ্ঠিত হলেও করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এ বছর তা হচ্ছেনা।

আজ সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা পৌণে তিনটায় মহাকবির আবক্ষে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর দুপুর ৩টায় আলোচনা অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মধুকবির জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে আগামী ২৫ জানুয়ারি ১ দিন মধুকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। যথাযোগ্য মর্যাদায় জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি (বাংলা ১২ মাঘ) যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন সাগরদাঁড়ী গ্রামের ঐতিহ্যবাহি দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রাজ নারায়ণ দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। অসাধারণ মেধার অধিকারী মধুসূদন দত্ত ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খামখেয়ালি, বিলাস প্রিয়। যশ খ্যাতির মোহে আচ্ছন্ন মধুসূদন দত্ত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ১৮৪৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। যা তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তিনি হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। মাদ্রাজে থাকাকালে নীলকর ডুগাল্ট্ ম্যাকটাভিসের আশ্রিত কন্যা রেবেকা ম্যাকটাভিসকে বিবাহ করেন। এরপর তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক ইংরেজ অধ্যাপকের কন্যা হেনরিয়েটাকে বিবাহ করেন। শিক্ষা জীবনে মধুসূদন গ্রীক, ফার্সি, জার্মান, ল্যাটিন, সংস্কৃত ভাষা সহ বহুভাষা রপ্ত করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ মহাকাব্য মেঘনাদবধ।

এ ছাড়া রচনা করেন কাব্য ‘তিলোত্তমা সম্বব, ‘ব্রজাঙ্গনা’ ‘বীরঙ্গনা’ চতুদর্শপদী কবিতাবলী, নীতিমূলক কবিতা, নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ ‘পদ্মাবর্তী’ ‘কৃষ্ণ কুমারী’ ‘মায়া কানন’, প্রহসন ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ’ ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, উপকথা-রসাল স্বর্ণ লতিকা, অশ্ব ও কুরঙ্গ, কুক্কট ও মনি, মেঘ ও চাতক, সিংহ ও মশকী। ব্যাঙ্গ রচনা- রোগ শয্যায়, দুর্যোধনের মৃত্যু। ইংরেজী রচনাবলী-THE CAPTIVE LADIE, THE VISION OF THE PAST ইত্যাদি মধুসূদনের অমর সাহিত্য কর্ম। মাইকেল মধুসূদন মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ‘সমাধি লিপি’ নামে আট লাইনের একটি কবিতা লেখেন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত অসুস্থ্ হয়ে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতাস্থ আলীপুরের জেনারেল হাসপাতালে বেলা ২টার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩০ জুন সেন্ট জেমস চার্চ এবং ধর্মযাজকের উদ্যোগে খৃষ্টীয় রীতি অনুযায়ী কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডের সমাধিস্থলে যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির মরদেহ সমাধি করা হয়।