নানা আয়োজনে যবিপ্রবি দিবস পালিত : শিক্ষক সমিতির বর্জন

নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষা ও গবেষণায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অর্জন গর্ব করার মতো এবং ঈর্ষণীয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষক-গবেষকদের উদ্ভাবিত জ্ঞান জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

সোমবার যবিপ্রবি দিবস-২০২১ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘রিসার্চ কন্ট্রিবিউশন অব জাস্ট ইন দ্য ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন এসব কথা বলেন।

সেমিনারে যবিপ্রবির শিক্ষক-গবেষক ড. মো. জাবেদ হোসেন খান, ড. ইমরান খান ও ড. আমিনুল ইসলাম তাঁদের গবেষণার ক্ষেত্র এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. মো. তানভীর হাসান এবং সঞ্চালনা করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক ফারহানা ইয়াসমিন।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২১-এর কর্মসূচি শুরু হয় এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন উপলক্ষে কাটা হয় কেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ভবনের সামনে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের ১৪টি চারা রোপণ করা হয়। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন পর্বের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মজিদ, ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব, অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, অধ্যাপক ড মোঃ জিয়াউল আমিন, ড. মো. জাফিরুল ইসলাম, ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ড. সুমন চন্দ্র মোহন্ত, ড. মো. মেহেদী হাসান, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবীব, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোঃ নাজমুল হাসান, শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের সহকারী প্রভোস্ট ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সহকারী প্রক্টর ড. মো. তানভীর ইসলাম, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ড. মো. আব্দুর রউফ, যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা আফিকুর রহমান অয়ন, সোহেল রানা, নাজমুস সাকিব, শিলা আক্তার ও কামরুল হাসান শিহাব, সাংবাদিক সমিতির নেতা মোসাব্বির হোসাইন, নাজমুল হোসাইন প্রমুখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, দপ্তর প্রধানগণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাজিয়ালী মৌজায় ৩৫ একর জায়গা জুড়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়।
২৫ জানুয়ারি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি উদযাপনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে পদন্নোতি, শ্রান্তি বিনোদন, শিক্ষা ছুটিসহ একগুচ্ছ অনিয়ম তুলে ধরে এই উৎসব বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

রবিবার যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম নুর আলম ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এমন একটি পত্র ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের কাছে দেয়া হয়েছে।

২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয়। এই দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে এবার সীমিত পরিসরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হবে। সকালে পতাকা উত্তোলনের পর ১৪তম দিবস উপলক্ষে ১৪ পাউন্ড কেক কাটা হবে। পরে বিভিন্ন অফিস প্রধানরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ১৪টি গাছ রোপণ করবেন। এরপর অনলাইনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

তবে এসব কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। কারণ হিসেবে তারা ভিসির কাছে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে সব শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রাপ্যতার তারিখ থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ডে সিদ্ধান্ত হলেও ভিসি তা কার্যকর করছেন না। শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ও ভাতা প্রদানে অনিয়ম করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা ছুটি পদোন্নতিতে অনিময়, সময়োপযোগী শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা না করাসহ সাত দফা অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরা হয় ওই চিঠিতে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, বর্তমান ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা না মেনে শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে বিরত করছেন। অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রতিনিয়ত যোগ্য শিক্ষকদের হয়রানি করা হচ্ছে। গত এক মাসে এসব বিষয় নিয়ে ভিসি স্যারের সাথে আমরা তিন দফা বৈঠক করেছি। বৈঠকে তিনি বিষয়গুলো মেনে নিলেও পরে তা কর্যকর করছেন না। এজন্য আমরা সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি লিখিতভাবে ভিসিকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষকদের প্রকৃত কাজ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা। এ বিষয়টিকে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। করোনাকালে যাতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না হয় এজন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এসে শিক্ষকদের বাইরের বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করতে চান। তাদের দাবির সাথে শিক্ষকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই নিয়ে মূলত তাদের সাথে আমার বিরোধ। শিক্ষক সমিতির বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বর্জনের ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ শিক্ষক তাদের সাথে নেই।