চল্লিশোর্ধ্বরাও করতে পারবেন টিকার নিবন্ধন

এখন থেকে ৪০ বছরের ওপরের যেকোনো ব্যক্তি সুরক্ষা ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকা নেওয়ার নিবন্ধন করতে পারবেন। দেশে করোনা টিকার নিবন্ধন শুরুর পর থেকে এত দিন সম্মুখ সারির ক্যাটাগরিতে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে ৫৫ বছরের ওপরের বয়সের মানুষের জন্য নিবন্ধন উন্মুক্ত ছিল। বিষয়টিকে অনেকেই নিয়ন্ত্রিত বলে মনে করছিলেন। এতে নিবন্ধনের গতিও কমে গিয়েছিল।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সরকার সাধারণ মানুষের জন্য বয়সসীমা ৫৫ থেকে ৪০ বছরে নামিয়ে দেয়। ফলে এখন সম্মুখ সারির মনোনীত মানুষের সঙ্গে ৪০ বছরের ওপরের যেকোনো ব্যক্তি নিবন্ধন করতে পারবেন। সরকারের নির্দেশনা পেয়ে গতকালই সুরক্ষা ওয়েবসাইটে বয়সসীমা ৪০ বছর সংযুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, এখন নিবন্ধনের গতি বেড়ে যাবে। বাড়বে টিকা নেওয়ার হারও।

এদিকে দেশজুড়ে করোনার টিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গতকালও রাষ্ট্রীয় ও সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা টিকা নিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা, খাদ্যমন্ত্রী সাধন কুমার মজুমদার, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ হোসেন চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ আরো বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য গতকাল টিকা নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ হোসেন চৌধুরী টিকা নিয়েছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে, খাদ্যমন্ত্রী সাধন কুমার মজুমদার টিকা নিয়েছেন শ্যামলীর ২৫০ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল কেন্দ্রে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম টিকা নিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। টিকা নিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি মো. সালাহউদ্দিনও।

এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আরো কয়েকজন সচিব গতকাল বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা নেন। এ ছাড়া গতকাল বিভিন্ন কেন্দ্রে সাধারণ মানুষও টিকা নিয়েছেন। অনেকেই আগে থেকে নিবন্ধন করা না থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল টিকা নেন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সাত হাজার ১৭৮ জন। সব মিলিয়ে ৭৭ হাজার ৬৬৯ জন টিকা নিয়েছেন। আর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে পাঁচ লাখ ১২ হাজার পাঁচ জনের।

এদিকে প্রথম দিন যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মানুষের সামান্য হাতে ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব ছাড়া আর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।

গত রবিবার টিকা নিয়ে গতকাল সোমবার যথারীতি আদালতে যান প্রধান বিচারপতি। তিনি সেখানে অন্য বিচারক ও আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টের পাইনি। আপনারাও সবাই টিকা নিন। সবার টিকা নেওয়া উচিত।’

একইভাবে রবিবার টিকা নেওয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিভিন্ন হাসপাতালে আগের দিনও কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা গেছে। বিশেষ করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকাকেন্দ্র যেখানে স্থাপন করা হয়েছে তা নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা গেছে। বিশেষ করে ওই দুই হাসপাতালে শত শত সাধারণ রোগীর মধ্য দিয়ে ঢুকতে হয় টিকাকেন্দ্রে। আবার হৃদরোগ হাসপাতালে টিকাকেন্দ্র করা হয়েছে পাঁচ তলায়। পর্যাপ্ত লিফটের ব্যবস্থা নেই। ফলে ওপরে উঠতে মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছোট একটি কনফারেন্স রুমের মধ্যে টিকার বুথ করায় সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালেরই বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকরা।