জিয়ার খেতাবে হাত দেয়ার অধিকার কারো নেই: মোশাররফ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাকে ‘আগুন নিয়ে খেলা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন দেলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে সরকারের হাত পুড়ে ছাই হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। তার মতে, জিয়াউর রহমান নিজের বীরত্ব দিয়ে এই খেতাব অর্জন করেছেন, তাই এটা কেড়ে নেয়ার অধিকার কারো নেই।

রবিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় মোশাররফ এই হুঁশিয়ারি দেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের যৌথ উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনোক্রমে লেখা সম্ভব হবে না। আজকে ‍যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখছেন বিকৃত করছেন। ইতিহাস যারা লেখবেন সত্যকে মেনে নিয়ে লেখবেন। এদেশে ২৫ মার্চের আগে স্বাধিকারের আন্দোলন হয়েছে, স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন হয়েছে, পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দালন হয়েছে, কিন্তু জিয়াউর রহমানই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছেন। আর তাকে নিয়ে টানাটানি। আগুন নিয়ে খেলছেন। আপনাদের হাত পুড়ে যাবে, ছাই হয়ে যাবে। এই খেতাব কেউ দেয় নাই, এই খেতাব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ যারা খেতাব পেয়েছেন তারা প্রত্যেকে অর্জন করেছেন। এই খেতাবের ওপরে হাত দেয়ার কোনো অধিকার কারো নেই।’

প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকা সভায় জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

মোশাররফ বলেন, ‘আজকে দেখে বাংলাদেশে সুশাসনের অভাব, বিচারহীনতা, আজকে গণতন্ত্র নাই, অর্থনীতিতে লুটপাট, ব্যাংকগুলো লুটপাট হচ্ছে, রিজার্ভ ডাকাতি হচ্ছে, শেয়ারবাজার লুট হচ্ছে। একটি জায়গা আপনি দেখাতে পারবেন না যেখানে তারা কোনো ভালো কাজ করেছে এবং ন্যায়ের কাজ করেছে, কোনো সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের এই দুর্গন্ধ বাংলাদেশে শুধু নয়, বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আল-জাজিরা তারা একটা রিপোর্ট করেছে, সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করে দিলেন। ওই রিপোর্টের বিষয়বস্তুগুলো যদি মিথ্যা হয় তাহলে সরকারের দায়িত্ব ছিল এই সম্বন্ধে প্রতিবাদ করা। কিন্তু তারা বিষয়বস্তুর মধ্যে যাননি, শুধু রাজনৈতিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন।’

মোশাররফ বলেন, ‘এটাই কি শেষ। দি ইকোনমিস্ট আরও এক স্টেপ সামনে গিয়ে যে লেখা লিখেছে কই এখন পর্যন্ত সরকার থেকে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি। কারণ তার কাছে জবাব নেই। অতত্রব এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে সাহসের সাথে পথ চলতে হবে। অনেকে বলে হাসিনা একটার পর একটা সে আইটেম দেয় আমাদেরকে ব্যস্ত রাখার জন্য। আমাদের কিন্তু এখন ব্যস্ত থাকার দরকার নাই, অনেক আইটেম নিয়ে মাথা ঘামানোরও দরকার নাই। ওই হীরক রাজার দেশের যে একটা শ্লোগান- রশি মেরে মারো টান, রাজা হবে খান খান। আমাদের ওই জায়গা থাকতে হবে।’

ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি তো সাক্ষী আছি। অমিত বিক্রমে জেড ফোর্স যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সবচাইতে বেশি সাহসিকতা পদক অর্জন করেছে, সবচাইতে বেশি মানুষ জেড ফোর্সের সৈনিকেরা জীবন দিয়েছে এদেশে স্বাধীনতার জন্যে। অথচ তার কমান্ডারের একটি খেতাব যা দেয়া হয়েছে সেটি এখন ছিনিয়ে নেবার জন্যে কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’

হাফিজ বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজাকার শব্দটি অত্যন্ত ঘৃণিত। আরেক শব্দ ঘৃণিত হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে ঘৃণিত হয়ে গিয়েছে যার নাম জামুকা। নব্য রাজাকারের দল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায়। যুদ্ধ কত ভয়াবহ এই জামুকা-ফামুকা কল্পনাও করতে পারে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বর্তমান সরকার যদিও নির্বাচিত না, তাদেরকে অনুরোধ করবো, এই ধরনের ঘৃণ্য উদ্যোগ নিয়ে জিয়াউর রহমানের মতো সেরা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে টানাটানি করে নিজেরা নব্য রাজাকারের পরিণত হবেন না। এই ঝুঁকি নেবেন না আপনারা। অনাগত প্রজন্ম আপনাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখবে। আজকে থেকে ১০০ বছর পরে কে চিনবে কে জামকুা, কে মন্ত্রী কে কি ছিল। কিন্তু সেখানে জিয়াউর রহমান এবং এসব মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমি শহীদ জিয়াউর রহমানের পক্ষে। আমার মতে জিয়াউর রহমান বীর পুরুষদের একজন, খুনিদের বিপক্ষে। তুমি কে? এই খেতাব কেড়ে নেয়ার প্রস্তাব দেবার তুমি কে? তুমি তো যুদ্ধ করোনি। বুকের রক্ত ঢেলে দিতে যারা রণাঙ্গনে ছিল তারা সেই বীরউত্তম, বীরপ্রতীক, বীরবিক্রম। তুমি কে- একথা আপনাদের সকলকে এখন বেশি বেশি করে বলতে হবে। আজ থেকে আমরা শপথ করি- আমরা জিজ্ঞাসা করব, তুমি কে?’