বিএনপির ৭ মার্চের কর্মসূচিকে ‘ভণ্ডামি’ বললেন কাদের

obidul kader
ফাইল ছবি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপির ৭ মার্চের কর্মসূচি পালনকে ভণ্ডামি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এটিকে ইতিহাস বিকৃতির আস্ফালন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের মুখচ্ছবিকে মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে। এটা তাদের আরেকটা রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দিয়ে মহান স্বাধীনতার মাসে কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তামাশা করেছে। যার মাধ্যমে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাঙালির আত্মপরিচয় বিনিমার্ণে ইতিহাসের সঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, তেমনি আজ একদিকে হঠাৎ করে ৪৬বছর পর তাদের বোধোদয় হয়েছে। যে ৭ মার্চকে তারা নিষিদ্ধ করেছিল। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু নিষিদ্ধই করেনি, এ ভাষণ যারা বাজাত সেই তাদেরকে নির্য াতন করত, জেলে দিত এবং অনেককে অত্যাচার নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে দিয়েছিল ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর অপরাধে।

সেই ৭ মার্চ তারা পালন করছে। মুখচ্ছবিকে আজকে মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে। ৭ মার্চ পালন করছে, আবার আরেকদিকে বলছে, একটি ভাষণ স্বাধীনতা এনে দেয়। আসলে এই কথাটি বলার জন্যই তারা ৭ মার্চের আলোচনা করছে। এটা তাদের আরেকটা রাজনৈতিক ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই না বলেও অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির এক নেতা আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কাছে এটা বোধগম্য নয়, এই উর্ধ্বর্তপূর্ণ বক্তব্য ওই নেতার ব্যক্তিগত নাকি বিএনপির দলীয় বক্তব্য। গত চার-পাঁচ দিনে বিএনপির ওই নেতার বক্তব্য নিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপি অফিসিয়াল কোনো ব্যাখ্যা প্রদান না করে প্রমাণ করেছে, এটি তাদের দলগত অবস্থান।

তবু আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন করি তিনি যেখানে আজ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ স্বাধীনতার আদর্শ নিয়ে তারস্বরে চিৎকার করছেন, আজকে মায়াকান্না কাঁদছেন, দরদ দেখাচ্ছেন কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করছেন। তিনি কী জবাব দেবেন? রাজশাহীতে তার দলের নেতা প্রকাশ্যে যে বক্তব্য রেখেছেন, আরেকটা ১৫ আগস্ট ঘটানোর, এরকম মানসিকতা এরকম চরিত্র নিয়েই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবেন, সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মুহূর্তে এই ধরনের উর্ধ্বৃত্তপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার সাহস আপনার দলের নেতা কী করে পেল? এটা আপনাদের দলীয় বক্তব্য কি না? আপনার কাছে জানতে চাই?

দেশবাসী ভুলে যায়নি, ১৫ আগস্টের ধারাবাবিহক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তারা ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে নৃশংস হত্যাযঞ্জ সংঘটিত করেছিল সেকথাও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি আরও বলেন, আজকে বিএনপি চক্রান্তের পথই বেঁচে নিয়েছে। কারণ তারা নির্বাচন করতে গেলে জনগণ তাদের ভোট দেয় না। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আন্দোলন করতে গেলে জনগণ সাড়া দেয় না। তারা বারবার চেষ্টা করেছে, হাঁকডাক দিয়েছে কিন্তু জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয় না। কারণ বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে সহিংসতা, বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে জ্বালাও-পোড়াও, তাদের আন্দোলনের নামেই হচ্ছে আগুন সন্ত্রাস। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের জানা আছে।

বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তাদের ভোট কমে যাচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সে কারণেই আজকে তাদের ভোটে ভরাডুবি। এটা সরকারেরও দোষ না, ভোট কম পরে নির্বাচন কমিশনেরও দোষ না। জনগণের কাটগড়ায় পরিত্যক্ত জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি আন্দোলনে যেমনিভাবে ব্যর্থ, তেমনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও জনগণের আস্থা অর্জনেও তারা ব্যর্থ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিএনপির ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগেই বলেছি, বিএনপি ভোটের মাঠে সাড়া পাচ্ছে না। সাড়া পাচ্ছে না বলেই পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বুঝতে পেরেছে, তাদের ভোট নেই। সেটা তারা বুঝতে পেরেছে। সে কারণেই তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। তারা নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে আসুন, আজকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন সমৃদ্ধি শান্তির পক্ষে অগ্রসরমান অভিযাত্রায় শামিল হই। রাজনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনি, গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনি।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দিপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা।