হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যা বলল বিএনপি

গত ২৭ ও ২৮ মার্চ বিক্ষোভ ও হরতালের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের তাণ্ডবে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত ও শিবির সম্পৃক্ত, বিএনপির মদদে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে করা অভিযোগের জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, হেফাজতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনায় গত শনিবার (২৭ মার্চ) বিক্ষোভ ও রোববার হরতাল ডাকে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হামলা, ভাংচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি থানায় হামলা, ভাংচুর, অস্ত্র লুটসহ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

হরতালের দিনও ঢাকাসহ সারা দেশে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করলে তাদের ওপর হামলা, এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই দুই দিনে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গত রোববার পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০ ও চট্টগ্রামে ৪ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হেফাজতের এসব তাণ্ডবের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ত।

গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হরতাল ডেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দেশ পরিচালনা ব্যাহত করতেই এসব অপচেষ্টা। শুধু হেফাজত নয়, বাঁশের কেল্লার সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে যারা আগে সন্ত্রাস ও জঙ্গি সংগঠন করেছিল তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। রণকৌশল জানান দিচ্ছে। এতে জামায়াত-শিবির, হরকাতুল জিহাদ ও বিএনপির মদদ থাকতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের নেতা, মন্ত্রী, অনেক মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে হেফাজতকে বিএনপি ইন্ধন দিয়েছে। কর্মসূচি পালনে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে অবৈধ সরকারের পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে মানুষের হত্যার প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি পালন করেছি। সরকার প্রচার চালাচ্ছে, আমরা হেফাজতকে সমর্থন দিয়েছি। উসকানি তো সরকার দিয়েছে। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তারা বায়তুল মোকাররমে সাধারণ একটি বিক্ষোভ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গণমাধ্যমে ছবিও এসেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এক নেতা গুলি করছে। এই যে মানুষের ওপর আঘাত এসেছে, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। আমাদের হিসাবে গত কয়েক দিনে ১৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাস নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় করোনা সংক্রামণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবসময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করা হচ্ছে যে, খুব চমৎকারভাবে সরকার করোনা সমস্যাটাকে সমাধান করছে, তারা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছে। যেটা একেবারেই মিথ্যা কথা। আজকে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে, ভয়ংকরভাবে বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ একটা ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের যে উদ্যোগ তা লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যে দৃশ্যমান একটা ক্যাম্পিং থাকবে, প্রচার থাকবে, উদ্যোগ থাকবে- সেটা কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমার যেটা আপত্তি- আজকে যে স্বাস্থ্য বিভাগ ১৮ দফা দিয়েছেন পালন করার জন্য। সরকারের উদ্যোগটা কোথায়?

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, তারা (সরকার) ফ্যাক্টসগুলোকে গোপন করছে, ডাটাগুলোকে গোপন করছে। এর আগে টেস্টই করেনি যে করতে পেরেছে তার ওপর তারা নিদের্শনা দিয়েছে। এখনো আপনার যে টেস্ট হচ্ছে- তা খুবই কম।

তিনি বলেন, আমি এর আগে বলেছি যে, আমার বাসার ছেলে সে গিয়েছিল টেস্ট করতে, এক ঘণ্টার মধ্যে বলেছে যে, টেস্ট হবে না, তার পরের দিন আস। এভাবে টেস্টগুলো হচ্ছে না। শুধু ঢাকাতেই না সারা বাংলাদেশেই টেস্টগুলো হচ্ছে না। আমার মনে হয় ১০ শতাংশও টেস্ট হচ্ছে না, আমার ধারণা এটা। এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী সরকার। তারা কখনোই এটাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করা বা সেটার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা এই কাজগুলো তারা করেনি।

মাস্ক পরার বিষয়ে প্রচারণার চালানোর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই যে জনগণের অ্যাওয়ারনেসের অভাব আমরা দেখতে পারছি, মাস্ক পরে না। কেন পরে না? কারণ সরকার সেটা তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়নি। যে ক্যাম্পিং করা দরকার, যে উদ্যোগটা নেওয়া দরকার সেই উদ্যোগটা আসেনি সরকারের কাছ থেকে। যার ফলে সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বাড়ছে।