বাংলাদেশকে হারিয়ে আলোচনায় সুনীল

বর্তমানে যারা ফুটবল খেলছেন তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দুই নম্বরে ছিলেন ভারতের সুনীল ছেত্রী, যিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই গোল করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ছাড়িয়ে গেছেন আর্জেন্টিরার লিওনেল মেসিকে।

ছত্রিশ বছর বয়সী এই ফুটবলার ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারদের একজন। তিনি সোমবার রাতে ভারতকে এনে দিয়েছেন ছয় বছরের মধ্যে প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জয়। আর এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসির চেয়ে দু’টি গোল বেশি আছে সুনীল ছেত্রীর।

এই পরিসংখ্যান দেখে অনেকে লিখছেন, লিওনেল মেসির চেয়ে এগিয়ে সুনীল ছেত্রী। কিন্তু বাংলাদেশের নামকরা কোচ সাইফুল বারি টিটু তার বিশ্লেষণে বলেছেন, এই তুলনাটাই আসলে দেয়া উচিত হবে না। লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন, যেখানে চিলি, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, একুয়েডর এমন সব দলের সাথে খেলেছেন তিনি। ব্রাজিলের মতো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সাথে রয়েছে লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিক। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের সাথেও হ্যাটট্রিক আছে লিওনেল মেসির।

২০১৭ সালে যখন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে ঘাম ঝরে তখন ইকুয়েডরের বিপক্ষে লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিকেই দলটি রাশিয়ার টিকেট নিশ্চিত করে। ২০১৭ ফিফা বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার, ‘গোল্ডেন বল’ পান লিওনেল মেসি।

সাইফুল বারি টিটু কোনো তুলনাতে যেতেই চান না। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ম্যারাডোনা-পেলের তুলনাও করেন তাতেও আমি বিশ্বাস করি না। আলাদা প্রজন্ম, খেলার ধরন আলাদা।’

তবে ভারতের মতো দেশের একটা খেলোয়াড় যখন মেসির চেয়ে বেশি গোল করেন, সেটা তার একটা অর্জন এমন মত টিটুর। এটা মানতে হবে। এটা সোজা কথা না। যখন কেউ নিজ দেশের হয়ে একটা রেকর্ড গড়ে তাদের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করবো। কিন্তু এই তুলনাটা না দেয়াই উচিত হবে।

সুনীল ছেত্রী দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের আইকন। এই অঞ্চলের ফুটবলের প্রতিযোগিতাটা আসলে নিজেদের মধ্যেই হয়। সেখানে ভারত অন্যতম সেরা দল এই জোনের।

সাইফুল বারি টিটু বাংলাদেশের অনেক ক্লাবেরই কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। আবাহনীর দায়িত্বে থাকাকালীন এশিয়ান পর্যায়ের একটি প্রতিযোগিতায় আবাহনী ও ব্যাঙ্গালুরু যখন মুখোমুখি হয় তখন সুনীল ছেত্রীকে পর্যবেক্ষণ করেন টিটু।

তিনি বলেন, ‘খেলার পরে ড্রেসিংরুম থেকে কিটম্যানের সাথে আইসবক্স টানছিলেন সুনীল ছেত্রী। শুধু খেলোয়াড় ব্যাপার না, ওর প্রচণ্ড বিনয়ও আছে। এটাই ওকে বড় মাপের ফুটবলার বানিয়েছে আজ।’

বারি টিটু আরো বলেন, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিজ নিজ পর্যায়ের অর্জনের জন্য সাধুবাদ জানানো প্রয়োজন।

নানা উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে সুনীল ছেত্রীর ফুটবল জীবন। ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন এই ফুটবলার। ছয়বার তিনি জিতেছেন অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। ১৬ বছর ধরে চলছে তার আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার।

মোহনবাগানে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তুলনামূলক পাতলা গড়নের সুনীলকে বেগ পেতে হয়েছে একজন স্ট্রাইকার হয়ে উঠতে। কিন্তু তিনি স্ট্রাইকারের অন্যান্য গুণগুলো দ্রুত রপ্ত করেছেন। দ্রুত পজিশন বুঝে নেয়া, বল পায়ে না থাকা অবস্থায় নিজের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাওয়া ও দলের সদস্যদের ফাঁকা জায়গা পেতে সাহায্য করা।

সুনীল ছেত্রী ইউরোপ আমেরিকাতেও ফুটবল খেলতে যান। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাবেক দল স্পোটিংয়ের বি দলের হয়ে পাঁচ ম্যাচ খেলেন সুনীল।

তবে তার বিদেশভ্রমণ খুব একটা সুবিধার ছিল না। ফিরে এসে চার্চিল ব্রাদার্সে ধারে খেলার পর মূলত ব্যাঙ্গালুরুর হয়েই ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটান।

সূত্র : বিবিসি