দেশের করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

coronavirus

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আগামী কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

বৃহস্পতিবার একদিনে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যুর খবর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাবনায় দুশ্চিন্তার ছাপ তৈরি করেছে। কিন্তু সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখনো আসেনি বলেই তারা ধারণা করছেন। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, সেটি আসলে তিন সপ্তাহ আগের অবস্থার বর্তমান পরিণতি।

চলমান লকডাউন শুরু হওয়ার আগে সপ্তাহখানেক ধরে লাখ লাখ মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে গেছে, তার প্রভাব কী হতে পারে সেটি দেখার জন্য আরো তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

আবু জামিল ফয়সাল বলেন, আমরা খুব সৌভাগ্যবান হবো যদি দেখি যে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।সংক্রামক রোগবিষয়ক সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীরও বলছেন একই কথা।

অতীতে প্রবণতা ও বর্তমান পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ এস এম আলমগীর ধারণা করছেন যে, চলতি সংক্রমণের সর্বোচ্চ চূড়ার দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমার মনে হচ্ছে না এখনও পিক এসেছে। পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপ হচ্ছে, বলেন তিনি।

গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একদল গবেষক বলেছিলেন যে, জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিক বা সর্বোচ্চ চূড়া আসতে পারে। বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ-এর আওতায় এই গবেষণা করেছেন একদল গবেষক, যারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনসোর্টিয়ামের অংশ হিসেবে তা করেন।

কমো মডেলিং গ্রুপে পিক বা সর্বোচ্চ চূড়া বলতে দিনে অন্তত ১০-১২ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়াকে বোঝানো হয়। আইইডিসিআর বলছে, বাংলাদেশে ৩০টির বেশি জেলায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি। আর ২০টির বেশি জেলায় সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশ কিংবা তার চেয়েও বেশি।

এ এস এম আলমগীর বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে সংক্রমণের হার আবারও বাড়তে শুরু করেছে এবং এই প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। যেসব জায়গায় সংক্রমণ এরই মধ্যে অনেক বেশি হয়েছে, সেখানে হয়তো তা কমতে শুরু করবে।

আবার নতুন নতুন জায়গায় সংক্রমণের হার বাড়তে থাকবে, বলেন এই গবেষক। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিদিন যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ২৮ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত চারদিনে কোভিড রোগী শনাক্তের মোট সংখ্যা ৩৩ হাজারের বেশি।

গত চারদিন যাবত দেখা যাচ্ছে, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড রোগী শনাক্তের হার প্রায় ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারজনের মধ্যে একজন আক্রান্ত। তবে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর কোথায়ও কোথায়ও শনাক্তের হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, গ্রামের দিকে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে এবং ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে না পারলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, লকডাউনের আগে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার কারণে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে।

গ্রামাঞ্চলে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি

এ এস এম আলমগীর বলেন, গ্রামাঞ্চলে তো স্বাস্থ্যবিধি বলতে কিছু নাই, এটাই বাস্তবতা। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে জাতীয়ভাবে শনাক্তের হার বাড়তে বাড়তে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে এবং এই হার বেড়ে হয়তো ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটাই স্বাভাবিক যে আক্রান্তের সংখ্যা যত বেশি হবে মৃত্যুর সংখ্যা ততই বাড়তে থাকবে।এখন যারা মারা যাচ্ছেন তারা তখনকার, যখন প্রতিদিন ছয়-সাত হাজার করে রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিন আট হাজারের উপরে পেশেন্ট হচ্ছে। এই মৃত্যুটা আপনি কিছুদিন পরে দেখবেন, বলেন তিনি।

আজকে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে সাত থেকে দশ দিন লাগে। এরপর তারা হাসপাতালে যাবেন। দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত হবার দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে মৃত্যু হচ্ছে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল পর্যন্ত চারদিনে যে ৩৩ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে দুই থেকে তিন শতাংশের মধ্যে যদি রোগ জটিল আকার ধারণ করে, তাহলে প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল উদ্বেগজনক অবস্থা,’ বলেন এ এস এম আলমগীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান লকডাউন যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে সংক্রমণের মাত্রা কমে আসবে। সূত্র : বিবিসি।