স্যোশাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়াতে আসছে নতুন আইন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (স্যোশাল মিডিয়া) ওপর নজরদারি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য আনা হচ্ছে নতুন আইন। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া বিল (আইন) তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

আইনটির উদ্দেশ্য আপাতদৃষ্টিতে প্রসন্ন। কেননা, এতে দেশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন ডেটা সুরক্ষার নিশ্চিয়তা দেওয়া হবে। তবে বিশেষজ্ঞ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের আশঙ্কা, এতে সুরক্ষার সুবিধা কম থাকবে। বরং ব্যবহারকারীর ডেটায় হস্তক্ষেপের বিষয়টিই বেশি থাকবে।

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের কোনও আইন নেই।

ডেটা সুরক্ষায় আমাদের কোনও আইন নেই এবং মানুষের গোপনীয়তা রক্ষার জন্যও কিছুই নেই এর মাধ্যমে লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের আইন মেনে চলতে বাধ্য করা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও খসড়া আইনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা এই ধরনের একটি খসড়া আইন প্রণয়ণে কাজ করছি। আইসিটি বিভাগই এটি তৈরি করছে।পলক বলেন, নতুন ডেটা সুরক্ষা আইনে বলা থাকবে- বিদেশি ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে জাতীয়ভাবে ডেটা সেন্টার তৈরি করতে হবে এবং ব্যবহারকারীর ডেটা দেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করতে হবে।

এটি আমাদের গুজব ছড়ানো এবং ইন্টারনেটের অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে, উল্লেখ করেন তিনি।

পলক বলেন, নাগরিকদের তথ্য দেশের ভেতরেই থাকবে তা নিশ্চিত করতেই এই নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ প্রধান সামাজিক আন্দোলন রাস্তায় নামার আগে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকেই শুরু হয়েছিল।

আর এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই নতুন তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। নতুন এই আইনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে ডেটা লোকালাইজেশন, অর্থাৎ বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি দ্বারা সংগৃহীত নাগরিকদের তথ্য জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

তবে আইনটির অব্যবহারের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যেহেতু বর্তমানে অফলাইনে ভিন্নমত পোষণ করার ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই মানুষ এখন ইন্টারনেট প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। এই আইনের ফলে মত প্রকাশের সেই জায়গাটুকুও আর থাকবে না বলে মনে করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কিছু ঘটনা দেখেছি, যেগুলো বেশ আলোচিত ঘটনা। বিশিষ্টজনের ব্যক্তিগত কথোপকথন প্রকাশ্যে এসেছিল। এগুলো কোনও বেসরকারি সংস্থা ফাঁস করেছে বলে কেউ বিশ্বাস করবে না।

আর এটা বিশ্বাস না করার পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। অবশ্যই, জাতীয় নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে প্রায়শই এগুলোকে পক্ষপাতমূলক স্বার্থের জন্য পুঁজি করা হয়। তারা বলেন, আমরা যা চাই তা হল এমন একটি আইন যা রাজ্যের কাছ থেকেও এই গোপনীয়তা নিশ্চিত করে।

তাদের মতে, সরকার যা করার চেষ্টা করছে সেটিকে ডেটা লোকালাইজেশন বলা হয়। আর ডেটা লোকালাইজেশন মানে হল যে ফিজিক্যাল ডিভাইসটিতে একজন ব্যক্তির ডেটা থাকে, তা সেই ব্যক্তির রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে থাকতে হবে, যা একটি দ্বিমুখী তলোয়ারের মতো।

আইনটি হওয়া উচিত যেকারও কাছ থেকে ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষার জন্য। এমনকি রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকেও। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন ট্র্যাকারের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫টি দেশের মধ্যে একটি যেখানে তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা বিষয়ক কোনও আইন নেই।

তাই বিশেষজ্ঞরা এ ধরণের আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন। তবে তারা আশঙ্কা করছেন খসড়া আইনে মূল বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।