যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হত্যাকাণ্ড : ১ বছরেও শুরু হয়নি বিচার প্রক্রিয়া

susu unnoyon kendro jessore

২০২০ সালের ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দী তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও করোনাকালীন সময়ে আদালত বন্ধ থাকায় শুরু করা যায়নি এ হত্যাকাণ্ডটির বিচার প্রক্রিয়া। তবে এ ঘটনার সাথে জড়িত চার কর্মকর্তাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, মামলাটি বর্তমানে নিম্ন আদালতে রয়েছে। শীঘ্রই যা জেলা দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর হতে পারে। সেইসাথে শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ বিচার প্রক্রিয়া।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোরের চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনার প্রায় ৬ মাস পর চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তদন্তকালে কেন্দ্রের ৪ কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে।

একইসাথে বন্দী থাকা চার শিশুর বিরুদ্ধেও মেলে তথ্য প্রমাণ। এরমধ্যে চার কর্মকর্তা ও চার বন্দি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া অপর চার বন্দি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেয়া হয়েছে।

তবে এজাহারভুক্ত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাময়িক বরখাস্ত কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুকের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি। এ কারণে চার্জশিটে তাকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনের সম্পৃক্ততা মেলায় চার্জশিটে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

চার্জশিটে অভিযুক্ত চার কর্মকর্তা হলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকোসোস্যাল কাউন্সেলর মুশফিকুর রহমান।

অভিযুক্ত কেন্দ্রের চার বন্দি কিশোর হলো গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটোরের হুমাউন হোসেন, মোহাম্মদ আলী ও পাবনার ইমরান হোসেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তরা হলো চুয়াডাঙ্গার আনিস, কুড়িগ্রামের রিফাত হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ও পাবনার মনোয়ার হোসেন।

আসামীপক্ষের আইনজীবী মঈনুল ইসলাম ময়না বলেন, করোনার কারণে এতদিন স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আদালতের কার্যক্রম চলমান ছিলো না। ফলে মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতেই রয়ে গেছে।

যেহেতু আদালতের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছে, সুতরাং শিঘ্রই মামলাটি জেলা দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে।

সেটি সম্পন্ন হলে দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বর্তমানে মামলার সকল আসামী জামিনে রয়েছেন বলে জানান মঈনুল ইসলাম ময়না।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইদ্রিস আলী জানান, ইতিমধ্যেই মামলাটির চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে তা জেলা জজ আদালতে আসলে বিজ্ঞ বিচারক প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রের প্রধান প্রহরী নূর ইসলামকে মারপিটের জেরে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর বন্দীদের বেধড়ক মারপিট করা হয়।

এতে তিন কিশোর নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ১৪ আগস্ট রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়।

একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১৬ ও ১৭ আগস্ট কেন্দ্রের বন্দী আট কিশোরকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। গ্রেফতারের পর কেন্দ্রের পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।