নিভৃতে কল্যাণে মানুষের পাশে

সম্প্রতি দেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে মানবতার কল্যাণ আর কোভিড-১৯ আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন। নিজেদের সাধ্যমতো নিভৃতে সহযোগিতা দিতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সংস্থার পক্ষ থেকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ সাতক্ষীরা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী জেলার হাসপাতালগুলোতে জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান করা হয়।

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্তবধায়ক ডা. আকতারুজ্জামান জানান, করোনাকালে হাসপাতালটিতে একটি আইসিইউ সাপোর্ট স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা ছিলো না। এসময় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে হাসপাতালারে জরুরী প্রয়োজনীয়তাগুলো জানতে চায়। তখন একটা তালিকা দেওয়া হয়।

সেখানে আইসিইউ-এর জন্যে ৩টি প্লাজমা ভাইরাস স্টেরিলাইজার চাওয়া হয়। যার প্রতিটার মূল্য চার লক্ষ টাকার উপরে। এছাড়া সাধারণ রোগীদের কথা মাথায় রেখে ৫০টি বেড, ২টি ইসিজি মেশিন, ১০টি হুইল চেয়ার, ১২টি সেক্রেটরিয়েট টেবিল চাওয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকের আন্তরিকতায় আমাদের চাহিদা মতো সবই পেয়েছি।

তারা আমাদের যে প্লাজমা ভাইরাস স্টেরিলাইজার দিয়েছেন তা খুবই দামি একটি মেশিন। এটা হচ্ছে করোনাভাইরাস ধ্বংস করার একটি মেশিন। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউ চিকিৎসকদের জন্য এটি স্থাপন করা হয়েছে। মেশিনটি হেপা ফিল্টার আর কার্বন ফিল্টারের মাধ্যমে জীবাণু সরিয়ে ফেলে।

শেষ ধাপে প্লাজমা কেমিক্যাল জারনের মাধ্যমে করোনা জীবাণুকে পুরোপুরি ধ্বংস করে আমাদের চিকিৎসক দের নিরাপত্তা দেয়।’ এদিকে হাসপাতাল সূত্র জানায়, সম্প্রতি হাসপাতালটির সম্প্রসারিত চারতলায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সহায়তায় ৩টি ওয়ার্ড চালু করা হয়।

বেডের অভাবে একটি ওয়ার্ড চালু করা যাচ্ছিলনা। ঠিক সে সময় পাশে এসে দাঁড়ায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আজাদুল কবির আরজু’র মানুষের কল্যানে কাজ করার একান্ত ইচ্ছায় সমাধান হয় সমস্যার। ৫০টি আইরন কট বেড প্রদানের মাধ্যমে ৫ সেপ্টেম্বর চালু হয় মহিলা পেইং ওয়ার্ড। নতুন এই ওয়ার্ডেটিতেই মাকে নিয়ে ভর্তি উপশহর এলাকার মিফতাহুল জান্নাহ।

তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল হিসেবে আমরা যেটা জানি, এখানে এসে সে ধারনা পাল্টে গেছে। এখানে এসে ভর্তি হয়ে বেড পেয়েছি। বেডগুলো অনেক সুন্দর। মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা আছে।’ ওয়ার্ডটিতে দায়িত্বপালনরত হাসপাতালের স্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘কিছুদিন আগে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন থেকে আমরা কিছু বেড পেয়েছি, সুন্দর কিছু টেবিল পেয়েছি। আগে আমরা ভাঙা টেবিলে কাজ করতাম। রোগীরা ঠিক মতো বেড পেতো না, ফ্লোরে থাকতো। কত কষ্ট করেছে। এখন এগুলো পাওয়ার

পরে আমরা স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারছি। সবকিছু গোজগাজ করে রাখতে পারছি। রোগীরাও উপকৃত হচ্ছেন।’
এবিষয়ে হাসপাতালটির তত্ত¡াবধায়ক ডা. আকতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যম থেকে করোনা ইউনিট ও রোগীদের জন্য আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছিলাম, কিন্তু হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের কল্যাানে তেমন কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। এ জন্য আমারা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের কাছে ৫০টি আইরন কট বেড চেয়েছিলাম। সেটা আমরা পেয়েছি। যা দিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর চালু হয়েছে একটি মহিলা পেইং ওয়ার্ড।’

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় সাড়ে ৮১ লক্ষ টাকার মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছে। এর মধ্যে যশোরের মৈত্রী সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১০৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার , ০৮ টি উপজেলায় কোভিড-১৯ সচেতনতা ও ভ্যাকসিন গ্রহণ বিষয়ক মাইকিং, ৪২জন এতিম ও দুস্থের মাঝে খাদ্য বিতরণ, সাতক্ষীরায় কোভিড- ১৯ আক্রান্তদের সেবার লক্ষ্যে পন্টুন তৈরীতে আর্থিক সহায়তা এবং সংস্থার কর্মএলাকার ৪১ টি জেলায় এক লক্ষ মাস্ক বিতরণ অন্যতম।