বিক্ষোভরত কৃষকদের উপর মন্ত্রীর ছেলের গাড়ি, নিহত ৮

ভারতের উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরি এলাকায় বিক্ষোভরত কৃষকদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় অন্তত ৮ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত আরও অনেকে। এই ঘটনার পরই এলাকায় রণক্ষেত্র হয়ে যায়, অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় তিনটি গাড়িতে।

লখিমপুর খেরির জেলা শাসক অরবিন্দ কুমার জানিয়েছে নিহতদের মধ্যে ৪ জন কৃষক, বাকিরা আশিস মিশ্রের গাড়ি বহরের সাথে থাকা কর্মীরা।

জানা গেছে, রবিবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পৈত্রিক ভিটে লখিমপুর খেরির অন্তর্গত টিকুনিয়া নামক এলাকায় একটি কুস্তি প্রতিযোাগিতার অনুষ্ঠান চলছিল।

অনুষ্ঠানস্থলের কিছু আগেই কেন্দ্রের বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল কৃষকরা। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে আসার কথা ছিল উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাাদের।

স্থানীয়দের অভিমত, বিক্ষোভের অংশ হিসাবে বিক্ষোভকারীরা উপমুখ্যমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর ছেলে আশিস মিশ্র যখন উপমুখ্য মন্ত্রীকে আনতে যাচ্ছিলেন, সেসময় বিক্ষোভকারীরা তার গাড়ি ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।

এরপরই তার সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। এর কিছু পরেই কৃষকদের উপর দিয়ে তিনি আচমকা গাড়ি চালিয়ে দেন বলে অভিযোগ।

গাড়ির ধাক্কায় কয়েক ফুট ছিটকে পড়েন কৃষকরা। এর পরই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সেখানকার পরিস্থিতি।
পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায় বলে অভিযোগ।

এর মধ্যে একটি গাড়ি আশিস মিশ্রের। ঘটনার পর টিকুনিয়ায় বিশাল সংখ্যায় কৃষকদের জমায়েতের ফলে উত্তেজনা বিরাজ করে। ইতিমধ্যেই আশিস মিশ্রের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

কারণ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার তরফে অভিযোগ করা হয়েছে বিক্ষোভ চলাকালীন অবস্থায় কৃষকদের ওপর আশিসের গাড়ি চালানোর কারণেই এই দুর্ঘটনা।

যদিও আশিসের দাবি বিক্ষোভকারীরাই তার গাড়িবহরের ওপর হামলা চালায় এবং তাতে তার গাড়ির চালক সহ চারজন নিহত হয়। অন্যদিকে নিজের ছেলে আশিস মিশ্রের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র। তার দাবি ‘আমার ছেলে ঘটনাস্থলের আশেপাশেই ছিল না।

এই ঘটনার নিন্দা করে তাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যায়িত করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সেইসাথে তিনি জানান রাজ্য সরকার এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে এবং দোষীদের আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। তার আগে রাজ্য পুলিশের সহকারী মহা পরিচালক প্রশান্ত কুমারকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নির্দেশ দেন যোগী।

রাজ্য পুলিশের ডিজি মুকুল গোয়েল জানান লখিমপুরের ঘটনার পর গোটা রাজ্যে সতর্ক করা হয়েছে। লখিমপুর সংলগ্ন প্রতিটি জেলায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই ধরনের প্রতিটি কার্যকলাপের দিকে নজর রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনায় গোটা ভারত জুড়েই নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) নেত্রী মায়াবতী, ছত্তিশগড়েরর মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল সহ অনেকেই।

ট্যুইটে ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লেখেন লখিমপুর খেরিতে এই বর্বরোচিত ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কৃষকদের প্রতি বিজেপি সরকারের এই উদাসীনতা আমাকে গভীরভাবে কষ্ট দেয়। সোমবার তৃণমূলের ৫ সাংসদ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। কৃষকদের প্রতি সবসময় আমাদের নি:শর্ত সমর্থন থাকবে।

ওই ঘটনার পর টিকুনিয়ায় দুর্ঘটনাগ্রস্থ পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য লখিমপুর খেরির উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে সোমবার ভোর সাড়ে ৫ টা নাগাদ হারগাঁও এলাকায় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পথ আটকায় পুলিশ। পরে তাকে আটকও করা হয় বলে অভিযোগ।

উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে প্রিয়াঙ্কার পোশাক ধরে টানাটানি করা হয় এবং তার হাত ধরে মুচকিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এর বিরুদ্ধে তাদের লড়াই জারি থাকবে বলেও জানানো হয়।