দক্ষিণ চীন সাগরে দুর্ঘটনার কবলে মার্কিন সাবমেরিন

যুক্তরাষ্ট্রের একটি পারমাণবিক সাবমেরিন দক্ষিণ চীন সাগরের আশপাশের জলসীমায় পানির নিচ দিয়ে চলার সময় ‘অজ্ঞাত’ একটি বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ১৫ নাবিক সামান্য আহত হয়েছে।

এ ঘটনার পরও ইউএসএস কানেটিকেট নামের সাবমেরিনটি পুরোপুরি সচল আছে, ধাক্কায় এর কী ক্ষতি হয়েছে তা পুরোপুরি যাচাই করা যায়নি বলে মার্কিন নৌবাহিনীর মুখপাত্রের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সাবমেরিনটি এখন গুয়ামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে, বলেছেন ওই মুখপাত্র। এমন এক সময়ে ইউএসএস কানেকটিকেট ‘অজ্ঞাত বস্তুর’ সঙ্গে ধাক্কা খেল, যখন ওই অঞ্চলকে ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে; তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে চীনা বিমানের একের পর এক ‘অনুপ্রবেশের’ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক তৎপরতাও দৃশ্যমান।

কী কারণে সাবমেরিনটি অজ্ঞাত বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে, তা এখনও অস্পষ্ট, বলছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ইউএসএস কানেটিকাটকে যে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে, সেটি বিশ্বের অন্যতম বিরোধপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।

চীন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অংশের মালিকানা দাবি করে এলেও প্রতিবেশী অনেক দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের তাতে আপত্তি আছে। ফিলিপিন্স, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে চীনের বিরোধ কয়েক দশকের। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওই অঞ্চলে উত্তেজনাও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে চীনবিরোধী অংশকে সমর্থন ও কোথাও কোথাও মদদ দিয়ে আসছে। কয়েক সপ্তাহ আগে তারা যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য নতুন একটি নিরাপত্তা জোটও করেছে। এ জোটের ফলে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন বানানোর প্রযুক্তি পাবে।

অকাস নামের এই জোট যে চীনকে আটকাতে, তা সবার কাছেই পরিষ্কার। এ পদক্ষেপের পাল্টায় তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান উড়িয়ে বেইজিং তার নিজের জোর দেখিয়েছে, ধারণা অনেক পর্যবেক্ষকের।

তাইওয়ান প্রণালীর আশপাশে শান্তি বিঘ্নিত হয় এমন পদক্ষেপে ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান। তাইওয়ান প্রণালীই তাইওয়ানকে চীন থেকে আলাদা করেছে।

স্বশাসিত দ্বীপটিকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সুলিভান বলেছেন, সেই দিন যেন কখনোই না আসে, তা এড়ানোর চেষ্টায় এখন আমরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি, আমি কেবল এটুকুই বলতে চাই।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, চীন ২০২৫ সালের মধ্যে পুরোদস্তুর আগ্রাসন চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ দাবি করে আসছে।

অন্যদিকে চীন স্বশাসিত দ্বীপটিকে ‘বিচ্ছিন্ন প্রদেশ’ হিসেবে বিবেচনা করে। কোনো না কোনো একদিন দুটি ভূখণ্ড ফের একত্রিত হবে বলেও প্রত্যাশা বেইজিংয়ের। এজন্য প্রয়োজন পড়লে বল প্রয়োগ করার হুমকিও দিয়ে রেখেছে তারা।