জাওয়াদ’র প্রভাবে যশোরে সবজিসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

ঘূর্ণিজড় জাওয়াদ’র প্রভাবে সারা দেশের ন্যায় যশোরেও বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবারও যশোরে টানা বৃষ্টি অব্যহত ছিল । এদিন ভোর ৬ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

যা দেশে সর্ব্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে টানা দুদিন যশোরে বৈরী আবহাওয়ায় বিরাজ করায় স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। টানা বৃষ্টিতে কৃষকের আলু,সবজি,সরিষা এবং পাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়ে গেছে।

অধিকাংশ কৃষকের ধান বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি যদি দীর্ঘ হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন তারা। যশোরে আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিজড় জাওয়াদ’র প্রভাবে শনিবার থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।

টানা বৃষ্টির কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটছে। সোমবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত যশোর জেলায় ৮২ মিলিমিটার যা দেশের সর্ব্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন জেলায় সবোর্চ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিলো ২০ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

রোববারও দেশের সর্ব্বোচ্চ বৃষ্টিপাত যশোরে ছিলো ২৭ মিলিমিটার। এছাড়া দেশে সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা এদিন রেকর্ড করা হয় টেকনাফে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়ার আর সর্বোনিম্ন তেঁতুলিয়া ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাতে সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বাড়বে।

এদিকে, দুদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সকাল থেকে খেটে খাওয়া মানুষকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ভ্যান চালক জামাল আহম্মেদ বলেন,গত দুদিন ধরে বৃষ্টি ও শীতের কারণে ভ্যান চালাতে পারেনি রোজগারও নেই।

কোনো আয় না থাকায় অনেক কষ্টের মধ্যে আছি। ওই এলাকার রওশনারা বেগম নামের এক নারী বলেন, বৃষ্টি ও শীতের কারনে আমরা টিনের ঘরে বসবাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠে কাটা ধান ভিজে আনেক ক্ষতি হয়েছে।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, দুদিন আগে ১২ কাটা জমির আমন ধান কেটে রেখেছি। কিন্তু দুদিন ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়ে গেল। এই বৃষ্টি যদি অব্যহত থাকে ধানের অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন এই কৃষক।

সদরের চুড়ামণকাটি অঞ্চলের কৃষক বিলাল হোসেন জানান, এবার তিনি আড়াই বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে ধান কাটা হয়ে গেছে। বিচালি রক্ষার জন্য মাচা করা হয়েছে। মাঠের সবজির ক্ষতি হবে।

এই বিষয়ে যশোর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যশোর জেলার কৃষকরা তাদের আমন ধান ঘরে নেওয়া শেষ পর্যায়ে। এই বৃষ্টিতে আমন ধান ঘরে তুলতে বৃষ্টি কিছুটা বাগড়া দিয়েছে। যদি এই বৃষ্টি অব্যহত থাকে তাহলে ধানের কিছুটা ক্ষতি হবে।

সেই সাথে শীতকালিন সবজি, মসূর ও সরিষার ক্ষতি হবে। এতে কৃষিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারি অপু জানান, বৃষ্টির পানি যাতে পৌর এলাকায় না জমে সেজন্য ড্রেনগুলো পরিস্কার করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদ’র প্রভাবে ৪৮ ঘন্টার টানা বর্ষণে সবজির ভান্ডার খ্যাত যশোরের সবজিসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুইদিনের ভারি বর্ষণে জমিতে পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে শীতকালীন সবজি, ডাল, শরিষা, গম, বীজতলাসহ রবি মৌসুমের নানা ফসল। এতে চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

যশোর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইদিনে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে যশোরে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, অসময়ে এই রেকর্ড পরিমাণ টানা বর্ষণে শীতকালীন সবজি শিম, মূলা, ফুলকপি, আলুসহ নানা ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

এরমধ্যে ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর সবজি, ৪ হাজার ১৬৩ হেক্টর মুষুরের ডাল, ৯ হাজার ৯১০ হেক্টর শরিষা, ২৫৬ হেক্টর আলু, ২৬ হেক্টর গম ও ২৫৩ হেক্টর জমির বোরো ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সবজি ও ফসল কাজে আসলেও বেশিরভাগ ক্ষেতেই নষ্ট হবে। এতে চাষীদের ব্যাপক আর্থিক লোকশান গুনতে হবে।