মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

Kaligonj MU Collage Pic

কালীগঞ্জের সরকারি মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে একটি কুচক্রি মহল। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট কতিপয় শিক্ষক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ। আর এই ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধন দিচ্ছেন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত। তিনি এক সময় ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতেন। আর এই অধ্যক্ষ অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমেই এই কলেজে নিয়োগ পান। যা তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অডিট রিপোর্টে তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, সরকারি বিধি মোতাবেক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের জন্য ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে। কিন্তু মাহবুবুর রহমানের ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল। এখানে অনিয়মের মাধ্যমে তিনি নিয়োগ পান। নিয়োগের পর মাহবুবুর রহমান প্রভাষকের স্কেলে বেতন-ভাতা উত্তোলন করতেন। পরবর্তীতে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন দেখিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে শুরু করেন। তার এসব অনিয়ম ২০১৪ সালে কলেজ পরিচালনা পরিষদের কাছে ধরা পড়ে। যে কারণে তাকে ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর কলেজ পরিচালনা পরিষদ তাকে কলেজ থেকে বরখাস্ত করে। বর্তমানে বাংলা বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক সুব্রত কুমার নন্দী সাময়িক সময়ের জন্য কলেজের পাঠদান কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে মাহবুবুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আবার স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। তদন্তে এসব জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। বরখাস্ত হওয়ার পরে বহুবার সে আমার হাতে-পায়ে ধরে বহাল হতে চেষ্টা করে। তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কয়েক বার আমার বাড়িতে এসে ধর্ণা দেয়। তারপরও আমি তাকে বহালের বিপক্ষে ছিলাম। কিন্তু তার অসুস্থ্য বাবা এসে আমার কাছে ক্ষমা চায়। এছাড়া কালীগঞ্জের বেশ কয়েকজন মানুষ অনুরোধ করে। তার নামে দুর্নীতির মামলা হয়। সে একজন চরম মিথ্যাবাদী এবং একজন জাল-জালিয়াতে পারদর্শী ব্যক্তি।
বহিস্কৃত হওয়ার পর মাহবুবুর রহমান উচ্চ আদালতে মামলা করেন। ২০১৯ সালে রায় পাওয়ার পরও তিনি কলেজে যোগদান না করে টালবাহানা করতে থাকেন। এতে করে কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন। গত বছর (২০২১) ডিসেম্বর থেকে তিনি অনিয়মিতভাবে মাসে এক-আধ দিন এসে ৩০ দিনের স্বাক্ষর করে চলে যান।

অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, সেই সময়ের কলেজ কমিটি তাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়।

অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় সম্প্রতি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল ও সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টনের বিরুদ্ধে একটি সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৭ বস্তা খাতা চুরির অভিযোগে মামলা করেন। এই মামলায় ছয়জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। এরা সকলেই অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের অনুসারী। স্বাক্ষীদের দুইজন অফিস সহায়ক এবং অন্য চার জন জামায়াত- শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, সংবাদপত্রে খবর দেখে শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করা হয়। শিক্ষা বোর্ড থানায় সাধারণ ডায়রি করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু থানা সাধারণ ডায়রি নিতে অস্বীকার করে। পরে আদালতে মামলা করি।

শিক্ষা বোর্ড সাধারণ ডায়রি কিম্বা মামলা করার কোন লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান টালবাহানা করে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা ঘুরিয়ে নিয়ে যান।

তিনি নিয়মিত কলেজে আসেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত কলেজে যাই।

কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মাসে এক-আধ বার এসে খাতায় স্বাক্ষর করে যান। মাহবুবুর রহমান সর্বশেষ কবে কলেজে এসেছেন বা আবার কবে আসবেন তা কলেজের শিক্ষার্থী কিম্বা শিক্ষক কর্মচারীরাও ঠিক বলতে পারেননি।
বর্তমান সাময়িক সময়ের জন্য কলেজের পাঠদান কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলা বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক সুব্রত কুমার নন্দীর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, তাকে কে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছে বলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন। বলেন, সুব্রত একজন বাটপার। টাউট।

তবে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের নিজ হাতে লেখা পত্রে সুব্রত কুমার নন্দীকে দায়িত্ব দেওয়ার লিখিত প্রমাণ রয়েছে।
কলেজের অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল, যিনি মাহবুবুর রহমানের নিয়োগের সময় উপধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি বলেন, মাহবুবুর রহমানের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ। কারন ওই সময় মাহবুবুর রহমানের অভিজ্ঞতা ১৫ বছর ছিলনা এবং তার এমফিলও শেষ হয়নি। তার নিয়োগের সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুর রশিদ নিজেই নিজের নামে চিঠি ইস্যু করে নিয়োগ পরীক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হন। যে কারনে কলেজের সভাপতি তৎকালীন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক আবু সাঈদ ফকির অধ্যক্ষ পদে মাহবুবুর রহমানকে নিয়োগ দিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবের কারনে তিনিও অসহায় হয়ে এক পর্যায়ে নিয়োগ দিতে বাধ্য হন। অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে প্রথমে মাহবুবুর রহমান প্রভাষকের স্কেলে বেতন উত্তোলন করতেন।

কলেজ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খাতা চুরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাঠদান কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্ব প্রাপ্ত বাংলা বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক সুব্রত কুমার নন্দী বলেন, কলেজ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খাতা চুরি হয়েছে, এটা আপনাদের কে বলেছে ? কারিগরি শিক্ষা বোর্ড তো এমন কোনো অভিযোগ করেনি ? এখানে কোন চুরির ঘটনা ঘটেনি।

কলেজের দুই শিক্ষকের নামে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মাহবুবুর রহমান এ মামলা করতে পারেন না। মামলা করতে হলে খাতার বৈধ কর্তৃপক্ষ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মামলা করতে পারে। অথবা ওই সময়ে দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটেনি। শিক্ষা বোর্ডও কোন অভিযোগপত্র দেয়নি। এছাড়া আমরা ব্যক্তিগতভাবে মোবাইলে যোগাযোগ করেছি। এ রকম কোন অভিযোগের কথা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কেউ বলেননি।

কলেজের তত্ত্বাবধায়ক কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন বলেন, মাহবুবুর রহমান কলেজে আসেন না। তিনি মাসে হয়তো এক-আধ বার কলেজে আসেন বলে আমি জানি। বাংলা বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক সুব্রত কুমার নন্দী পাঠদান কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এটা আমি জানি। আমার যে দায়িত্ব সেটা পালন করি।