দুর্যোগ ক্যানসারের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

দুর্যোগ ক্যানসার নির্মূলের জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চলছে বহুদিন ধরে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। ‘ভ্যাকসিনিয়া’ নামে একটি ভাইরাস টিকা পশুদের ওপর ট্রায়ালে ইতিবাচক ফল লাভের পর বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে ট্রায়াল শুরু করেছেন।

ক্যানসারের কোষকে সংক্রমিত এবং ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভ্যাকসিনিয়া। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাইরাস আমাদের কোষগুলোকে সংক্রমিত করে এবং তারপরে প্রতিলিপি তৈরির জন্য কোষের জেনেটিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। সেটাকে বিনাশ করবে এই টিকা।

ইউরেক অ্যালার্ট জার্নাল, সায়েন্স অ্যালার্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, জি-নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, এটি ক্যানসার নিরাময় করতে পারবে বলেই আশা বিজ্ঞানীদের। এই বিশেষ টিকা ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে নষ্ট করতে পারে। ফলে ক্যানসার আর ছড়াতে পারে না।

এই থেরাপিতে ভ্যাকসিনিয়া নামের একটি ভাইরাস শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সেই ভাইরাস ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে ধরে ধরে মারতে শুরু করে। কিন্তু আশপাশের সুস্থ কোষের কোনো ক্ষতি করে না।

ক্যানসার গবেষণা সংস্থা ইমুজিন লিমিটেড বলছে, এই চিকিৎসা ক্যানসারের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও সাহায্য করতে পারে। এই সংস্থাটিই ভাইরাস ভ্যাকসিনিয়া তৈরি করছে।

জানা গেছে, এই ট্রায়াল শেষ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। আমেরিকা জুড়ে ১০০ জন ক্যানসার রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। যারা ইতিমধ্যে কমপক্ষে দুটি অন্যান্য চিকিৎসার চেষ্টা করেছেন।

ভ্যাকসিনটি দুটি গ্রুপে পরিচালিত হবে, প্রথমটি ভ্যাকসিনিয়া গ্রহণ করবে এবং অন্যটি ক্যানসার-হত্যাকারী ভাইরাস এবং একটি ইমিউনোথেরাপি ড্রাগ গ্রহণ করবে।

প্রাণীদের ওপর ভাইরাস পরীক্ষা করার সময় বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই অসাধারণ সাফল্য দেখেছেন, যা পরীক্ষায় টিউমারকে সঙ্কুচিত করতে সক্ষম হয়েছিল।

যদিও একটি সফল প্রাণীর পরীক্ষা মানুষের পরীক্ষায় সাফল্যের সূচক নয়, বিজ্ঞানীরা এখনো আশাবাদী যে এটি শরীরকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করার জন্য নতুন দরজা খুলে দিতে পারে।

২০২৫ সালের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কবে থেকে এর কাজ চলছে?: বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ভ্যাকসিনিয়া নিয়ে গত দুই বছর ধরে কাজ চলছে।

অন্য প্রাণীদের ওপর প্রয়োগ করে রীতিমতো সুফল পাওয়া গিয়েছে। আর তাই এবার পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের ওপরেও প্রয়োগ করা হচ্ছে এটি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনিয়া ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।

কতটা নিরাপদ এটি?: বাইরে থেকে ভাইরাস প্রয়োগ করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া আদৌ কতটা নিরাপদ? এই ভাইরাস শরীরের অন্য ক্ষতি করবে না তো? এমন প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন। যদিও গবেষকদের দাবি, এটি পুরোপুরি নিরাপদ।

এখনো পর্যন্ত এর বিশেষ কোনো বড়সড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি। এবার কি ক্যানসার নিয়ে দুশ্চিন্তার ইতি? এখনই এ বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না বিজ্ঞানীরা। তবে তাদের মত, এই ভাইরাস ঠিকমতো কাজ করলে ক্যানসার নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে।

আর তা যদি হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ক্যানসার নিয়ে দুশ্চিন্তার সম্পূর্ণ ইতিও হতে পারে। ক্যানসার আর পাঁচটি সাধারণ অসুখের মতো সহজ-সরল হয়ে যেতে পারে।